Wednesday, June 26, 2013

অভ্রান্ত বৈদিক জ্ঞান আমরা কেন বেদসমূকে সত্য বলে স্বীকার করব? By: Jago Hindu - জাগো হিন্দু

অভ্রান্ত বৈদিক জ্ঞান
আমরা কেন বেদসমূকে সত্য বলে স্বীকার করব?
By: Jago Hindu - জাগো হিন্দু
বেদসমূহ হচ্ছে সরাসরি ভগবানের বাণী, যা সৃষ্টির প্রারম্ভে প্রকাশিত হয়েছিল । যখন আপনি একটি মোটর সাইকেল কেনেন, তখন তার সঙ্গে একটি ইন্স্ট্রাক্শন ম্যানুয়াল বা ব্যবহার-বিধি নির্দেশিকা থাকে, যাতে ব্যাখ্যা করা থাকে কিভাবে ঐ মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করা যেতে পারে । ঠিক তেমনি, সৃষ্টির সময়ে ভগবান আমাদেরকে বৈদিক শাস্ত্র প্রদান করেন, যাতে ব্যাখ্যা করা থাকে এই জগত কেমন, কোথা থেকে উদ্ভূত, কিভাবে এই জগতে আচরণ করা উচিত ।

কয়েকটা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে বৈদিক জ্ঞান অভ্রান্ত । স্মরণাতীত কাল পূর্বে রচিত হলেও এমন সব তথ্য বেদে বর্নিত হয়েছে, বিজ্ঞান যা অতি সম্প্রতি আবিষ্কার করতে শুরু করেছে ।

১. ডালটন পরমানু আবিষ্কার করেছেন দু’শো বছরও হয় নি । আজ থেকে ৫০০০ বছর পূর্বে রচিত শ্রীমদ্ভাগবতের মূল শ্লোকে পরমানু অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম কণা – এই তথ্য দেওয়া হয়েছে । ব্রহ্মসংহিতাতেও(৫/৩৫) বলা হয়েছে যে, শৃঙ্খলাযুক্ত জড় পদার্থের বিন্যাসে বৃহত্তম ইউনিট বা একক হচ্ছে ব্রহ্মান্ড, ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে পরমাণু (অন্ডান্তরস্থপরমাণুচয়া-অন্তরস্থং) । এইরকম সর্ববৃহৎ
ইউনিট বা ব্রহ্মান্ড একটি নয়, কোটি কোটি (একোহপ্যসৌরচয়িতুং জগদন্ডকোটিং – ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৬) ।

২. পাঁচশো বছর আগে ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলেই এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, পৃথিবী সমতল – গোল নয় । বেদে (যা সময়ের আদি থেকে বিদ্যবান এবং পাঁচ হাজার বছর আগে যা লিপিবদ্ধ হয়েছে) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে যে পৃথিবী গোল – ‘ভূ-গোল’ ।

৩. ক্রিস্টোফার কলম্বাস পাঁচশো বছর আগে জানতেন না যে পৃথিবীতে সাতটি মহাদেশ রয়েছে । রয়েছে সাতটি মহাসাগর । কিন্তু বৈদিক শাস্ত্রে স্মরণাতীত কাল থেকে এই সব তথ্য রয়েছে ।

৪. আইনস্টাইন স্থান ও কালের আপেক্ষিক সম্পর্ক বা আপেক্ষিকতাবাদ আলোচনা করেছেন মাত্র কিছু বছর আগে । কিন্তু ভাগবতপুরাণে ৫০০০ বছর পূর্বেই কুকুদ্মি মুনির আপেক্ষিকতা বিষয়ক অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে ।

৫. জড় বিজ্ঞান এখনো মন কি তা জানাতে পারছে না; আজ থেকে ৫০০০ বছর পূর্বে বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে স্থূল-শরীর কঠিন(ভূমি), তরল(জল), গ্যাসীয়(বায়ু), তাপ(অগ্নি), আকাশ – ইত্যাদি পাঁচটি স্থূল উপাদানে তেরী, এবং মন, বুদ্ধি ও অহংকার – এই তিনটি সূক্ষ উপাদানে তেরী সূক্ষ শরীর । অর্থাৎ মন একটি জড় উপাদান (ভ.গী. – ৭/৪) ।

৬. বলা হয় যে শতকের গুণনীয়কের হিসাব ২/৩ হাজার বছর পূর্বে উদ্ভাবিত হয়েছে । অথচ বেদে অজস্র স্থানে শতকের গুণনীয়ক সংখ্যায় সহস্র-লক্ষ-কোটি-অর্বুদ-পরার্দ্ধের পর্যন্ত উল্লেখ রয়েছে । যেমন ৮৪ লক্ষ জীব প্রজাতির হিসাব (চতুর্লক্ষশ্চ মানবাঃ), আত্মার আয়তন (কেশাগ্রের ১০০০০ ভাগের এক ভাগ), কোটি কোটি ব্রহ্মান্ডের হিসাব (একোহপ্যসৌ রচয়িতুং জগদন্ডকোটিং/কোটিষ্বশেষ বসুধাদি বিভূতি ভিন্নম্ - ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৬) ইত্যাদি ।
গত শতাব্দীর ৯০ এর দশকে যখন বিশ্বের গণিতবিদ্ বিজ্ঞানীরা একটি অংকের কোণোভাবেই সমাধান করতে পারছিলেন না, দক্ষিণ ভারতের ক্ষণজন্মা গণিতবিদ্ (৩২ বছরে মারা যান) রামানুজম্ বৈদিক গণিতের সাহায্যে দুইভাবে সেই জটিল অংকের সমাধান বের করে গণিতবিদদের বিস্মিত করেন ।

৭. এমন কি চিকিৎসাবিদ্যার সঙ্গে সম্পর্ক-রহিত, সম্পূর্ণ অপ্রাকৃত মহাগ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবত এও আমরা মানব ভ্রূণবিদ্যা বা গাইনিকোলজির এক উজ্জল বিবরণ দেখতে পাই, যেখানে মাতৃগর্ভে ১ম মাস থেকে ১০ম মাস পর্যন্ত মাসানুযায়ী ভ্রূণদেহের বিকাশের পরযায়ক্রমিক বিশদ ও পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা প্রদত্ত হয়েছে । আজ অত্যাধুনিক জটিল যন্ত্রপাতির সাহায্যে যা জানা যাচ্ছে বৈদিক শাস্ত্রে তা হাজার হাজার বছর পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে ।

৮. বেদে বলা হয়েছে যে উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ – সকল জীবের দেহের মধ্যে রয়েছে প্রাণ, জীবনী শক্তি বা আত্মা । অথচ বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরে এই বিশ্বাস প্রচার করতেন যে উদ্ভিদের প্রাণ নেই – যতদিন না জগদীশ চন্দ্র বসু তাঁর পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করে দেখলেন যে উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে ।

 ৯. বেদ দাবী করেন যে এমনকি আগুনের মধ্যেও জীব রয়েছে । কিন্তু বিজ্ঞানীরা ভাবতেন যে, ফোটানো জলে বাঁচতে পারে না ব্যকটেরিয়া (সে জন্যই তাঁরা জল ফোটানোর মাধ্যমে নির্জীবকরণ করতেন) । কিন্তু সাম্প্রতিক চিকিৎসা গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে, এক ধরনের জীবানু রয়েছে যারা আগুনের মধ্যেও বাঁচতে সক্ষম, তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘আগুন ব্যকটেরিয়া’ (Fire Bacteria) । এছাড়া বহু প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণে এবং এমনকি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখেও তাঁরা ব্যকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন ।

১০. বেদে বিভিন্ন অবতারসমূহ বা মহাপরুষগনের বিশদ বিবরন-সহ ভবিষ্যতে তাঁদের আবির্ভাবের নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী প্রদত্ত হয়েছে । শ্রীমদ্ভাগবতে এরকম সাত জন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাবের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছেঃ- বুদ্ধদেব – শ্রীমদ্ভাগবতঃ- ১/৩/২৪, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু – শ্রীমদ্ভাগবতঃ- ১১/৫/৩২, মহাভারত – ১২৭/৯২/৭৫; চাণক্য –শ্রীমদ্ভাগবতঃ- ১২/১/১১; চন্দ্রগুপ্ত এবং সম্রাট অশোক – শ্রীমদ্ভাগবতঃ- ১২/১/১২, যীশু – ভবিষ্যপুরাণ

১১. মেডিকেল বিজ্ঞানে এখন উন্নতর মানের সার্জারী আমরা দেখতে পাই কিন্তু আমাদের শাস্ত্রে তা আগে বর্ণনা করা হয়েছে যেমনঃ- ঘনেশের মাথায় হাতির মাথা সংযোজন, দক্ষের মাথায় ছাগলের মাথা সংযোজন ইত্যাদি ।

১২. আজকাল দেখা যাচ্ছে টেষ্টটিউব বেবি উৎপাদন হচ্ছে যা আমাদের শাস্ত্রেও বনর্ণা করা হয়েছে যেমনঃ- দ্রোনাচার্য, গান্ধারির ১০০ পুত্র ইত্যাদি ।

১৩. বেদে উল্লেখ আছে সব মল অপবিত্র কিন্তু গরুর গোবর পবিত্র, তাই যে কোন পূজাপার্বণে বা মাটির ঘরে গোবর লেপন করা হয় । বিজ্ঞানীরা ১৯৪০ সালে গোবরের মধ্যে প্রতিষেধক গুনাবলি আবিষ্কার করেন ।
১৪. বর্তমানে আমরা যে মেডিটেশন বা বিভিন্ন মেথড দেখতে পাই তা আমরা বেদ থেকেই পেয়ে থাকি ।

১৫. গণিতশাস্ত্রে যে পাটিগণিত ও জ্যামিতি দেখতে পাই তা আগে যজুর্বেদে বনর্ণা করা রয়েছে ।

১৬. গোবিন্দ স্বামী নিউটনের ১৮০০ বছর পূর্বেই ‘ইন্টারপোলেশন ফর্মূলা’ (Interpolation formula) আবিষ্কার করেন । ভটৈশ্বরাচার্য নিউটনের ১০০০ বছর পূর্বেই ‘ব্যাকওয়ার্ড ইন্টারপোলেশন ফর্মূলা’ (Backward Interpolation formula) আবিষ্কার করেন । নীলকান্ত মুণি নিউটনের ৮০০ বছর পূর্বেই ‘সমধর্মী ক্রম’ (Infinite Geometric Progression convergent series) আবিষ্কার করেন ।

১৭. পরমেশ্বরাচার্য লুইলারের ৪০০ বছর পূর্বেই ‘লুইলার ফর্মূলা’ আবিষ্কার করেন ।

১৮. ইতিবাচক ও নেতিবাচক (Positive and Negative) সংখ্যা প্রথম লেখা হয় ব্রহ্মগুপ্ত কতৃক রচিত ‘ব্রহ্মস্পুত সিধান্তে’ গ্রন্থে । তাও হাজার বছর আগে ।


১৯. কোপার্নিকাসের চেয়ে কমপক্ষে ১০০০ বছর পূর্বে আর্যাভট্ট ‘নিগূঢ় তত্ত্ব’ আবিষ্কার করেন ।

২০. বৈদিক শাস্ত্রে পৃথিবীর ব্যাস হল ৭৮৪০ মাইল আর বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর ব্যাস ৭৯২৬.৭ মাইল । বৈদিক শাস্ত্রে লেখা আছে পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব ২৫৩০০০ মাইল দূরে আর বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব ২৫২৭১০ মাইল ।

২১. বোদ্ধায়ন কতৃক সর্বপ্রথম পাই "pi" এর মান গনণা করা হয় এবং তিনি পিথাগোরাস তত্ত্বের ধারনা ব্যাখ্যা করেন । ইউরোপিয় গনিতবিদদের পূর্বে ৬ষ্ঠ শতকে তিনি এটি আবিষ্কার করেছিলেন । ব্রিটিশ পন্ডিতগন কতৃক ১৯৯৯ সালে তা পরীক্ষিত হয় ।

২২. ভারত থেকে বীজগণিত, ত্রিকনোমিতি এবং ক্যালকুলাস এসেছে । একাদশ শতকে শ্রীধরআচার্য কতৃক দ্বিঘাতের সহসমীকরন (Quadratic equations) নির্ণীত হয় ।

২৩. গ্রীক ও রোমানদের দ্বারা ব্যবহৃত সবচেয়ে বড় সংখ্যা ছিল ১০৬ যেখানে বৈদিক সময়ে খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বছর শুরুর দিকে হিন্দুরা সুনির্দিষ্ট নাম সহ 1053 এর মতো বড় । এমনকি বর্তমানেও সবচেয়ে বড় ব্যবহৃত সংখ্যা হচ্ছে টেরাঃ 1012।

কৃতজ্ঞতাঃ সুশান্ত বান্দা
সনাতন ভাবনা ও সংস্কৃতি

No comments:

Post a Comment