Wednesday, June 26, 2013

শ্মশান ঘাট এর নাম শুনলে ভয়ে আঁতকে ওঠেন । ভয় পাবারই কথা । যেখানে আধপোড়া কাঠ , মৃতের বস্ত্র , চিতা ধূম , মাচা , ভস্ম , ভাঙ্গা কলসি পড়ে থাকে

শ্মশান ঘাট এর নাম শুনলে ভয়ে আঁতকে ওঠেন । ভয় পাবারই কথা । যেখানে আধপোড়া কাঠ , মৃতের বস্ত্র , চিতা ধূম , মাচা , ভস্ম , ভাঙ্গা কলসি পড়ে থাকে । রাতে যেখানে নাম না জানা না কত অজানা জীব জন্তু...র ডাক , নিশাচর পাখীড় হাড় হিম ডাক , শেয়ালের মড়া নিয়ে টানাটানি । কোন মাতৃ সাধকের কন্ঠে মেঘ গম্ভীর ‘জয় তারা’ স্মর – সাথে হরি ধ্বনি করে নিয়ে আসা কোন দেহ । এর সাথে জুড়ে দেওয়া হয় ভূত- প্রেত – পেত্নীর গল্প । মা কালী কিন্তু এই শ্মশানই থাকেন । তাঁর এক নাম শ্মশান বাসিনী । আসুন এঁবার অন্য কিছু জানি ।

কেন মা শ্মশান ভালোবাসেন ? যেখানে এত বিভীষিকা ? শ্মশান কিন্তু তপ ভূমি । ভগবান শিবের ভূমি । শ্মশান খুবুই পবিত্র স্থল । সবাই কেই আসতে হবে একদিন । কারোর রেহাই নেই । দুদিন আগে কেউ দুদিন পরে । ভূমিষ্ঠ হবার পর মানুষের শেষ গতি ঐ শ্মশান । নিস্তার নেই । শ্মশান এ এই দেহ পোড়ানো হবে । মিলে যাবে পঞ্চ ভূতে । পঞ্চ ভূতের শরীর পঞ্চ ভূতেই বিলীন হবে । আমাদের শরীর এ কামনা বাসনা আছে । সুন্দরতার ভক্ত আমরা । আত্মার এই কামনা বাসনা নেই । আত্মা কে কামনা বাসনা স্পর্শ করতে পারে না । কামনা বাসনা দেহের । শ্মশান এই কামনা বাসনার আখরা শরীর টি আগুনে ভস্মীভূত হচ্ছে । সমস্ত কামনা বাসনার শেষ এই শ্মশান । তাই মায়ের প্রিয় স্থান শ্মশান । কামনা বাসনা দূর না হলে মায়ের সাধনা পূর্ণ হয় না ।

অমুকে সুন্দর । অমুকে স্লিম ফিগার । অমুকে জীমে গিয়ে ইয়া বডি বানিয়েছে । অমুকের সুন্দর চুল । অমুকের সুন্দর রূপ । এই যে সুন্দর , মাসেল বানানো , সুন্দর চুল- এগুলি সব দেহের । আত্মার সাথে এগুলির কোন সম্পর্ক নেই । একজন সুন্দর তরুণীর যদি অকাল মৃত্যু হয় – তাকে শশানে পোড়ালে এক মুষ্টি ছাই হবে , একজন কুৎসিত কে পোড়ালেও এক মুষ্টি ছাই বের হবে । কোথায় যায় তখন এই সুন্দরতা ,


চুলের টেরি , মাসেল , দামী সুগন্ধির গন্ধ ? শশানে এই সব অহংকার আগুনে ছাই হয়ে যায় । এখানে অহংকার এর নাশ হয় । তাই শশান মায়ের প্রিয় । সব দেহই শশানে হয় ছাই । গরীব ধনী , বৃদ্ধা , সুন্দর , কুৎসিত সবাই । মৃত্যুর কাছে কোন ভেদাভেদ নেই । সে নিজের নিয়মে চলে ।

শ্মশান বৈরাগ্য ভূমি । মানুষ নানা গয়না গাটি , কেশ বিন্যাস , সুগন্ধি , মাসেল বানিয়ে নিজের দেহ কে সাজায় । মৃত্যুর পর শশানে ক্রিয়া কর্মের পর – এসব কিছুই থাকে না । সব ভস্ম । মানুষের মাটির শরীর । রক্ত , মাংস , হাড় – এই নিয়ে মানুষের কত অহংকার । মানুষ জন্মাচ্ছে , মাটির শরীর , ইহ লীলা সমাপন হলে তার দেহ শশানে এক মুষ্টি ছাই । মানুষ আসে একা , যায় একা । যা নেয় এখানেই নেয় , যা দেয় এখানেই দেয় । একটা কাপড়ের টুকরো সে নিয়েও আসে না , নিয়েও যায় না । শ্মশান বসে থাকলেও বৈরাগ্য জন্মে । বৈরাগ্য ভক্ত কে ভগবানের কাছে নিয়ে যায় । তাই মা শ্মশান প্রিয়া ।

মন্দিরে শাস্ত্র পড়ে যে শিক্ষা পাওয়া যায় । শ্মশান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে তার উদাহরণ দেখা যায় । মানুষ জন্মাচ্ছে , মড়ছে । কামনা বাসনার প্রতীক দেহ পুড়ে ছাই হচ্ছে । তাই সাধক সাধিকা গন সাধনার স্থান হিসাবে এই শশান কেই বেছে নেন । যারা মনে করেন শশান অপবিত্র স্থান - তারা মূর্খের রাজত্বে বাস করেন । শ্মশান খুবুই পবিত্র স্থান । যে স্থানে কামনা , বাসনা , অহংকার পুড়ে ছাই হয় , যে স্থান বৈরাগ্য সৃষ্টি করে – সে স্থান অপবিত্র কি ভাবে হতে পারে ? তাই মা শশানে থাকেন । এ স্থান বড়ই পবিত্র ।

এই রুপের গর্ব , এই সৌন্দর্য , এই মাসেল , এই কেশ বিন্যাস , এই দামী জামা কাপড় , নানান দামী সুগন্ধি , এই চেহারা কিছুই থাকেনা । আর মানুষ এগুলো কে নিয়েই লাফায় । ভাবুন এই দেহের শেষ পরিণতি কি ?
-আত্মজ্ঞানই জীবের মুক্তি। ( Share & tag) with friends

No comments:

Post a Comment