হিন্দু ধর্ম ও সমাজ পতনের মুলে এবং দুই থেকে আড়াই হাজার বৎসর ধরে দলে দলে
হিন্দুরা অন্য ধর্মে যাবার পিছনে যাদের বিশেষ অবদান সংক্ষেপে তাদের কিছু
কথা ---
(১)যাজ্ঞবল্কের পরিচয় –
ঋষি বইস্পায়নের শিস্য যাজ্ঞবল্ক্য ,
অসাধারন মেধাবি ও পণ্ডিত কিন্তু খুব অহংকারী ছিলেন। তার ওহঙ্কারের জন্য
গুরু তার উপর খুব বিরক্ত ছিলেন।এই অহংকার দেখে গুরু একদিন তাকে বললেন গুরুর
সব শিক্ষা ফিরিয়ে তিনি বাধ্য তাই দিতে বললেন। এটা শুনে যাজ্ঞবল্ক্য গুরু
প্রদত্ত সব জ্ঞান বমি করে দিলেন। কিন্তু এই জ্ঞান এতই পবিত্র ও মুল্যবান যে
তা নষ্ট হতে দেয়া জায় না গুরু তার অন্যান্য শিশ্যদের মাটিতে পরে থাকা
জ্ঞান খেতে , শিস্যরা তাই করলেন তিতির পাখির রুপ ধরে সে জ্ঞান খেয়ে ফেললেন।
এই ঘটনা দিয়ে বুঝানো হয়েছে যে জ্ঞান সব সময়ই পবিত্র। তাই এই উপনিষদের নাম
তৈতরিও উপনিষদ। পরে তিনি বেদের এই জ্ঞান পুনরায় লাভের জন্য সূর্যের উপাসনা
করে সূর্যের মত পবত্র হন। তিনি দায়ভাগ নীতির কথা বলে গেছেন। (তিনি কোন
যাজ্ঞবল্ক্য)
যাজ্ঞ বল্কের মতে পুত্র কত প্রকার – ঔরস ,
কশেত্রজ,পুত্রিকা,গুরজ,কানিন, পউনরভব, দত্তক,ক্রিত, ক্রিত্তিম, সবন-দত্ত,
সহুরজ, অপবিদ্ধ আবার সুদ্র দাসীর গর্ভেও পুত্র উৎপাদন করা যায়। তার এই
নিতির কারনে পুত্র সন্তান অনিবার্য হয়ে পরে । পুরুষ তন্ত্র প্রতিষ্ঠায়
ভদ্রলোক ছিলেন এক পায়ে খাড়া।
নারীজাতির প্রতি অবিচার ---
এক।
স্ত্রী যদি মদ্যপ, দীর্ঘ রোগগ্রস্ত, ধূর্ত, বন্ধ্যা, অর্থ নাশিনী , অপ্রিয়
ভাষিণী, কন্যা সন্তান প্রসবিনী অথবা পুরুষ দ্বেষিণী হয় এই আট প্রকার হলেই
সেই স্ত্রীর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করবে।
এটা বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় সে
সময় সমাজে মদের অবাধ প্রচলন ছিল, অসুস্থ স্ত্রী দ্বারা গৃহ কর্ম বা পুত্র
সন্তান উৎপাদন সম্ভব নয় তাই অপ্রয়োজনীয় দাসি বর্জন , সন্তান উৎপাদনই
স্ত্রীর কাজ তাই বন্ধ্যা নারী বর্জন, ধূর্ত , বুদ্ধিমতি , স্ত্রী নির্যাতন
করা কঠিন তাই বর্জন । অর্থ নাশিনী অর্থাৎ ব্যায়বহুল দাসি রাখা কোন কালেই
সম্ভব নয়।অপ্রিয়ভাষী বা স্পষ্ট বাদী ও পুরুষ বিদ্বেষী নারি – এতে বুঝা যায়
তখনও কোন কোন নারি প্রতিবাদি ছিল, প্রতিবাদি নারি কোন কালেই পুরুষ পছন্দ
করে না বরং ভয় পায় তাই বিদায়। কন্যা সন্তান জন্ম দিলে ভাগে কম পরবে তাই
বর্জনীয়। নারীকে পরাস্ত করার জন্যই তার এত উঠে পরে লাগা।
দুই। হীন
বর্ণের সংসর্গে গর্ভ হলে ,ভ্রুন হত্যা , স্বামী হত্যা, মহাপাতক বা শিস্য
সংসর্গ করলে তাকে পরিত্যাগ করাই বাঞ্ছনীয়। এগুলি ছাড়া যদি কেউ স্ত্রী
পরিত্যাগ করে তবে সেই স্ত্রীকে পূর্ববৎ ভরন পোষণ দিতে হবে। রাজা ঐ স্ত্রীকে
স্বামী ধনের এক তৃতীয়াংশ দেওয়াবেন। সম্ভবত তখনো নারীর শিক্ষা লাভের সময়তা
পুরাপুরি শেষ হয়নি। স্বামী, ভাই, পিতা, শ্বশুর শ্বাশুরি , দেবর এবং
অন্যান্য আত্মীয়েরা অলঙ্কার ও অন্যান্য ভোজ্য দ্রব্য দিয়ে স্ত্রীদেরকে
পরিতুষ্ট করবে। জাতে নারী বিদ্রোহ করতে না পারে। *স্ত্রীগণ ঘর গুছানো ,
বাড়ির সকল কাজে তৎপর থাকবে, সর্বদা হাসিমুখে থাকবে, অধিক ব্যয় করবে না
,শ্বশুর শ্বাশুরির চরন বন্দনা করবে,সব সময় স্বামীর বসে থাকবে। * স্বামী
বিদেশ গেলে স্ত্রী খেলা ধুলা করবে না শরীর সংস্কার , সভা দর্শন , হাস্য ও
পরগৃহে গমন পরিত্যাগ করবে। একেবারে ১৪৪ ধারা জারি ? * স্ত্রী জাতিকে
কন্যাকালে পিতা, বিবাহের পর ভর্তা ও বৃদ্ধ কালে পুত্র রক্ষা করবে। এই
প্রকার রক্ষক না থাকলে জ্ঞাতি গন রক্ষা করবে কারন স্ত্রী জাতি কখনোই
স্বাধীন থাকবে না । এটা ইসলামী অনুশাসনের বাইরে নয় মেয়েরা একা হজ্জ পর্যন্ত
করতে পারবে না। পতিহীনা স্ত্রী পিতা,মাতা,পুত্র,ভ্রাতা,শ্বশুর শ্বাশুরি বা
মামার আশ্রয়ে থাকবে । গৃহবন্দী যাকে বলে , এখানে বৈদিক ধর্মের কি আছে
বুঝলাম না । * কোন ব্যাক্তির স্ব বর্ণ স্ত্রী থাকতে অন্য বর্ণের স্ত্রীকে
দিয়ে ধর্ম করাবে না ,-- মুসলমানের মত পুরুষের বহু বিবাহ দাসত্ব প্রথা আর
বর্ণ বাদের মারাত্মক অবস্থা।
বিশেষ লক্ষণীয় - * ধনাধিকারি উইল করে
যাকে সম্পত্তির অধিকার দেবে তাকেই সেই ধনাধিকারির ঋণ পরিশোধ করতে হবে। *
বিবাহিতা অথচ সেই স্বামীর সাথে যৌন সম্পর্ক হয় নাই এই মেয়েকে স্বামীর
অবর্তমানে কেউ বিয়ে করলে শেষ বিবাহ কর্তা। * একজনের বিবাহিতা যুবতী পত্নি
বিশেষ বিপদে পরে যদি অন্যকে আত্ম সমর্পণ করে তাহলে ঐ পাত্র। * বহু ধন
সম্পন্না বা অপত্য বতী স্ত্রী যে পুরুষকে আশ্রয় করে সে ( মুহাম্মদের মত) ?
কোন বেশ্যা শুল্ক গ্রহন করার পর সহবাসে রাজি না হলে ঐ শুল্ক দাতা পুরুষকে
দ্বিগুণ জরিমানা দিতে হবে আর অর্থ গ্রহন না করলে শুধু মুখে মুখে অঙ্গীকার
করলে শুল্ক সমান অর্থ দণ্ড দিতে হবে । অর্থাৎ পুরুষের জন্যই তার আইন ।
এটা ৩-৪ শতকের মধ্য সময়ে রচিত তাই মনে প্রস্ন জাগে তিনি কোন যাজ্ঞবল্ক অবশ্যই বৈদিক যুগের নন , মুহম্মদ কি তারই শিস্য ?
,
দান ও অধ্যয়ন এই তিন তপস্যা, কৃষি , বানিজ্য, গো রক্ষা ও কুসীদ এই চারটা
জীবিকা।* শুদ্রের দ্বিজ সেবাই তপস্যা, শিল্প কর্ম জীবিকা । যারা নিজ নিজ
ধর্ম পরিত্যাগ করবে রাজা তাদের শাস্তি দিয়ে স্বর্গের ভাগীদার হবে। * পিতা
যদি জীবিত পুত্রের মুখ দেখেন তাইলে সাথে সাথে পিতৃ ঋণ হতে মুক্ত হবেন। বহু
পুত্র কামনা করতে হবে আরও অনেক পুন্য লাভের জন্য। * অশৌচে –ব্রতধারী ,
রাজা,ব্রাম্মন ইচ্ছানা হলে অশৌচ পালন করবেনা। অন্যদের জন্য ব্রাহ্মণদের ১০
দিন, ক্ষত্রীয়ের ১২ দিন , বৈশ্য ১৫ দিন, শুদ্র এক মাস । এটা মৃত অশৌচের
ব্যাপারে , জন্মটাও এরকমই জাতী ভেদে। বল এতা কি কোন বেদের কথা ? * স্বামী
জীবিত থাকতে যে নারী উপবাস করে ব্রত করে সে নারী স্বামীর আয়ু হরন করে ও
নরকে গমন করে । * কোন নারী তীর্থ স্থানে যেতে চাইলে স্বামী , শিব বা
বিষ্ণুর পা ধোয়া জল খেলেই পরম স্থান লাভ করবে । - তার অর্থ নারীর জন্য ঈশর
আরাধনা নয়। * নারী সর্বদাই সুচি , স্ত্রী উপপতি করলেও দুষ্টা হবেনা ।
নারীগণকে প্রথমেই চন্দ্র, গন্ধর্ব, বহ্নি প্রভৃতি স্বর্গবাসী গন ভোগ করেন
পরে মনুষ্য গন , তারা কোন রুপ মানসাদি সামান্য পাপে দুষ্ট হতে পারে না । *
জোর পূর্বক ধর্ষণে নারী দুষ্টা হয় না। * দীর্ঘকাল ব্যাপী তপস্যারত নারী রজঃ
হলেও ব্রত ভঙ্গ হবে না। * ব্রাম্মন যদি
উসট্রি ,গরধবি,মানুশি দুগ্ধ পান
করে তবে তপ্ত ক্রিচ্ছ স্রাধ কড়তে হবে । --- কি ভয়ানক কথা ? * স্ত্রীলোকের
আচরিত কাজে শুচির বিচার নাই অর্থাৎ পবিত্র। * ব্রাম্মন উলঙ্গ হয়ে স্নান
করবে না। ( মুসলমানদেরও উলঙ্গ হয়ে স্নান করা নিষেধ) অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়
ব্রাম্মন আর মুসলমানদের অনেক মিল।
--------------------------------------০--------------------------------
(২) অত্রি – সংহিতা প্রনেতাদের একজন –
তার
প্রথম পরিচয় ঋকবেদের একজন মন্ত্র দ্রষ্টা ঋষি হিসাবে। পুরানে ব্রম্মার
মানস পুত্র এবং দত্তাত্রেয় , চন্দ্র ও দুর্বাসার পিতা । আসলে অত্রি একটা
বংশ বা পরিবার তাই বেদের অত্রি আর সংহিতা প্রনেতা অত্রি এক নন অত্রি প্রনিত
সংহিতা সংক্ষিপ্ত ।
১ম শিক্ষা গুরুর মহিমা ,১১-২১ শ্লোকে বর্ণ
প্রথা,২২-২৮ শ্লোকে রাজার কর্তব্য , ২৯-৫১ সুচি,দান ইত্যাদি এভাবে ২২৬
শ্লোক পর্যন্ত আছে । নারী জাতি সম্পর্কে অন্যদের মত এত নিষ্ঠুর আইন সে চালু
করে নি তবে রাজতন্ত্র , ব্রাম্মন্য বাদ আর জাতি ভেদ প্রথার প্রবর্তক ও
প্রচারক এটা সত্যি । তার প্রবর্তিত আইনে বেদের কোন নাম গন্ধও নাই , সে
মনুর আগের আইন প্রনেতা তাই নারী সম্পর্কে তেমন বলে নাই অথবা ভারতেরই অন্য
প্রান্তে যেখানে মনুর নারী বিদ্বেষী প্রভাব তেমন ছিল না , তবে বৈদিক যুগের
নয়। অত্রি প্রনিত আইনের কিছু বিবরন --- * ব্রাম্মনের ৬ টা কাজ , -যজন ,দান
ও অধ্যয়ন এই তিনটা তপস্যা প্রতিগ্রহ , অধ্যাপনা, যাজন এই তিনটা জীবিকা। *
ক্ষত্রীয়ের ৫ টা কাজ যজন , দান , অধ্যয়ন এই তিন তপস্যা, অস্ত্র ব্যাবহার ও
প্রানি রক্ষা দুইটা জীবিকা।* বৈশ্যের যজন , দান ও অধ্যয়ন এই তিন তপস্যা,
কৃষি , বানিজ্য, গো রক্ষা ও কুসীদ এই চারটা জীবিকা।* শুদ্রের দ্বিজ সেবাই
তপস্যা, শিল্প কর্ম জীবিকা । যারা নিজ নিজ ধর্ম পরিত্যাগ করবে রাজা তাদের
শাস্তি দিয়ে স্বর্গের ভাগীদার হবে। * পিতা যদি জীবিত পুত্রের মুখ দেখেন
তাইলে সাথে সাথে পিতৃ ঋণ হতে মুক্ত হবেন। বহু পুত্র কামনা করতে হবে আরও
অনেক পুন্য লাভের জন্য। * অশৌচে –ব্রতধারী , রাজা,ব্রাম্মন ইচ্ছানা হলে
অশৌচ পালন করবেনা। অন্যদের জন্য ব্রাহ্মণদের ১০ দিন, ক্ষত্রীয়ের ১২ দিন ,
বৈশ্য ১৫ দিন, শুদ্র এক মাস । এটা মৃত অশৌচের ব্যাপারে , জন্মটাও এরকমই
জাতী ভেদে। বল এতা কি কোন বেদের কথা ? * স্বামী জীবিত থাকতে যে নারী উপবাস
করে ব্রত করে সে নারী স্বামীর আয়ু হরন করে ও নরকে গমন করে । * কোন নারী
তীর্থ স্থানে যেতে চাইলে স্বামী , শিব বা বিষ্ণুর পা ধোয়া জল খেলেই পরম
স্থান লাভ করবে । - তার অর্থ নারীর জন্য ঈশর আরাধনা নয়। * নারী সর্বদাই
সুচি , স্ত্রী উপপতি করলেও দুষ্টা হবেনা । নারীগণকে প্রথমেই চন্দ্র,
গন্ধর্ব, বহ্নি প্রভৃতি স্বর্গবাসী গন ভোগ করেন পরে মনুষ্য গন , তারা কোন
রুপ মানসাদি সামান্য পাপে দুষ্ট হতে পারে না । * জোর পূর্বক ধর্ষণে নারী
দুষ্টা হয় না। * দীর্ঘকাল ব্যাপী তপস্যারত নারী রজঃ হলেও ব্রত ভঙ্গ হবে না।
* ব্রাম্মন যদি
উসট্রি ,গরধবি,মানুশি দুগ্ধ পান করে তবে তপ্ত ক্রিচ্ছ
স্রাধ কড়তে হবে । --- কি ভয়ানক কথা ? * স্ত্রীলোকের আচরিত কাজে শুচির বিচার
নাই অর্থাৎ পবিত্র। * ব্রাম্মন উলঙ্গ হয়ে স্নান করবে না। ( মুসলমানদেরও
উলঙ্গ হয়ে স্নান করা নিষেধ) অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্রাম্মন আর মুসলমানদের
অনেক মিল।
(৩) বিষ্ণু সংহিতা ---
বিষ্ণু , বেদে পুরানে ধর্ম
শাস্ত্রে সর্বত্র অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখিত। কিন্তু এই বিষ্ণু আর
সংহিতাকার অর্থাৎ আইন প্রনেতা বিষ্ণু এক নন। তার আইনে –১০০ তা অধ্যায় এখানে
বিচার ব্যাব্যস্থা ,ধন ভাগ , পুত্র বিতরন,স্ত্রী ধর্ম ,ঘরের কাজ , দাত
মাজা , মল মুত্র ত্যাগ করলে মাটির ব্যাবহার সবই আছে মনে হবে আরেকটা কুরান ,
এই আইনও মনুর সমসাময়িক ।
যেমন কিছু বলছি –* অর্থ , যুদ্ধ, উগ্র কাজ ও
স্ত্রীলোকের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ক্লিব দিগকে নিযুক্ত করবে। * বালক ,
অনাথ, স্ত্রীলোকের সম্পত্তি রাজা রক্ষণাবেক্ষণ করবেন । * লিখিত সাক্ষ্য
দলিলের কথা আছে বর্তমান সময়ের মতই বিচার ব্যাবস্থা শুধু রাষ্ট্রের বদলে
রাজা । ব্যাকরণ আছে * পুত্রের শ্রেণীবিভাগ যাজ্ঞ বল্কের মতই । * সম্পত্তিতে
মেয়েদের অবস্থা মনু আর যাজ্ঞ বল্কের মতই । * তার আইনে একজন ব্রাম্মন
পুরুষের , ব্রাম্মন, ক্ষত্রিয়ের, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণের ৪ টা স্ত্রী
থাকতে পারে , ক্ষত্রীয়ের ৩ টা , বৈশ্যের ২ টা কিন্তু সুদ্রের মাত্র ১ টা
বউ থাকতে পারবে । * স্ত্রীলোকের মুখ নিত্য সুদ্ধ। এই আইনে স্বয়ংবরের কথা
আছে , দশবিধ সংস্কারে কথা আছে । * প্রবিজ্যাবলম্বিনী নারী কথা আছে অর্থাৎ
এই সময় পর্যন্ত নারী শিক্ষার প্রচলন ছিল। * পশু ও পুরুষ মৈথুন জাতিভ্রংশ
জনক পাপ ।* এখানে নরকের শ্রেণী বিভাগ – তামিস্র, অন্ধ তামিশ্র,বউরব,মহাবউরব
, কালসুত্র,মহানরক,সঞ্জিবন,অবিচী,তাপন,সম্প্রতাপন,সঙ্ঘাতক,কাকল,কুণ্ডল,
কুটটান ,পুতিম্রিত্তিক,লউহশঙ্কু, ঋচীস, বিষম পন্থান, কণ্টকশাললী, দীপনদী,
অসিপত্রবন,লুহচারক এই গুলি ভয়ানক সব নরকের কথা । আবার স্বর্গ লোক বিষ্ণু
লোকের কথাও আছে * স্ত্রী লোক এবং সুদ্রকে একই পর্যায়ে রাখা হয়েছে। * ভগবান
বাসুদেবের অর্চনার কথা ,* ব্রাম্মন ছাড়া ক্লিব হত্যা করলে এক ভার পলাল
দেবে ( শাস্তির বিধান)। * পিয়াজ , রসুন, মুরগি খেলে প্রায়শ্চিত্ত কড়তে
হবে।*ক্লিব , ব্যাভিচারি স্ত্রীলোক , ডাক্তার, ব্যাবসায়ী , গন,গনিকা সুদ্র
সম্প্রদায় কারো ঘরে অন্ন ভোজন নিষিদ্ধ , * যজ্ঞে প্রানি বধ করে খাওয়া ছাড়া
মাংস খাওয়া নিষেধ কারন ব্রম্মা স্বয়ং যজ্ঞের জন্যই পশুগনকে সৃজন করেছেন।
যজ্ঞ ছাড়া মাংস খেলে মৃত্যুর পর ক্ষতিকর সব ঘটনা ঘটবে । * রাজাকে ট্যাক্স
দেবার কথা , ভিক্ষা বৃত্তির উল্লেখ আছে।* লক্ষ্মী , রাম ,বাসুদেবের সবার
কথাই আছে । এখানে যেটা বিশ্রী ভাবে উল্লেখ আছে তা জাতিভাদ , রাজা ও
ব্রাম্মনের প্রাধান্য , এটা মনুর সমসাময়িক সময়ের ।
(৪) হারিত সংহিতা –
রাজপুতনার উদয়পুরের নিকটবর্তী হারিতের আশ্রম এখনো আছে ।
হারিত
সংহিতায় সাতটি অধ্যায় (১) বর্ণাশ্রম পরিচয় (২) তাদের আচার (৩) ব্রম্মচারীর
ধর্ম (৪) গার্হস্থ নিয়ম নীতি (৫) বানপ্রস্থ(৬) সন্যাসাশ্রম (৭) যোগ ধর্ম ।
নারী সমাজকে নিয়ে তেমন বাড়াবাড়ি নাই তবে রাজ তন্ত্র, ব্রাম্মন্যবাদ
সর্বোপরি জাতিভেদ প্রথার সুচনা লগ্ন বলা জায়। সম্ভবত মনুর কিছু দিন আগের
সময়।
(৫) উশনঃ সংহিতা –
উশনস বা উশনা পুরান প্রসিদ্ধ ঋষি ভৃগু
মুনির পুত্র , তিনি কাব্য নামেও পরিচিত আবার তিনি দৈত্য গুরু শুক্রাচার্য
হিসাবে পরিচিত । শুক্রাচার্যের নীতিশাস্ত্র এককালে চানক্য নীতি শাস্ত্রের
সমতুল্য ছিল।
এই সংহিতা বক্তা উশনার পুত্র ঔশন । উশনঃ সংহিতা তৃতীয়
শতাব্দীর পর রচিত হয় মাত্র ৯ টা অধ্যায় । (১) ব্রহ্মচারী হবার বিধি ও তার
কর্তব্য (২) শৌচ আচার (৩) ব্রহ্মচর্যাশ্রমে থাকা কালিন কর্তব্য (৪-৫)
শ্রাদ্ধ (৬) অশৌচ (৭) শ্রাদ্ধ । (৮-৯) প্রায়শ্চিত্ত বিষয়ে । তার মতে মাতার
মত দৈব নাই পিতার মত গুরু নাই । *জাতিভেদ প্রথার প্রচলন ও বাড়াবাড়ি ।
এই আইনে নারী নিগ্রহের বাড়াবাড়ি নাই কিন্তু জাতিভেদ প্রথার মারাত্মক রুপ।
(৬) অঙ্গির সংহিতাঃ –
অঙ্গিরা
মন্ত্র দ্রষ্টা ঋষি এবং সপ্তর্ষিদের একজন আবার তার নাম অঙ্গিরস । তিনি মুল
গোত্র প্রবর্তক এর গোত্র তিনটি শাখায় বিভক্ত – কেবলাঙ্গিরস,
গউতামাঙ্গিরস,ভরদবাজাঙ্গিরস। অঙ্গিরা জ্যোতিষ গ্রন্থের প্রনেতা ।
অঙ্গিরা
সংহিতার মাত্র ৭২ টি শ্লোক পাওয়া গেছে , মুলত প্রায়শ্চিত্ত নিয়েই এখানে
আলোচনা আছে। * নিল চাষ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে * নারী সম্পর্কে মারাত্মক নয় *
কঠোর জাতিভেদ প্রথা ।
তৃতীয় শতকে রচিত তাই সংহিতাকার অঙ্গিরা আর সপ্তর্ষি অঙ্গিরা এক নন ।
(৭) যম সংহিতাঃ –
তার
পরিচয় অজ্ঞাত ,পুরান মতে যম ব্রম্মার নাতি ও সূর্যের পুত্র , সম্ভবত যম
নামে কোন এক আইন প্রনেতা পণ্ডিত ছিলেন বা যমের নামে তা রচনা করেছিলেন।
এখানে মত ৭৮ টি শ্লোক আছে প্রায়শ্চিত্ত সম্পর্কেই বলা আছে তবে জাতিভেদ
প্রথার প্রচলন দেখা যায় , নারী বিদ্বেষ কম , এই সংহিতা অল্প আকারে পাওয়া
গেছে।
(৮) আপস্তম্ব সংহিতাঃ-
ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলে আপস্তম্ব মতাবলম্বীদের প্রাধান্য দেখে অনুমান করা যায় তিনি দাক্ষিণাত্যের অধিবাসী ছিলেন ।
এটা
৪-৫ শ খৃষ্টাব্দে রচিত ,১০ তি অধ্যায় , ১৯৭ টি শ্লোক আছে , নীল চাষ
নিরুৎসাহিত করা হয়েছে , প্রায়শ্চিত্ত ও জাতিভেদ প্রথার মারাত্মক কড়াকড়ি
লক্ষ্য করা যায়। নারী জাতি নিয়ে তেমন বাড়াবাড়ি নাই ।
(৯) সংবর্ত সংহিতা –
ঋষি
অঙ্গিরার পুত্র , তেমন কিছু পাওয়া যায় নি তবে মেয়েদের বাল্য বিবাহ দিতে
হবে নতুবা নরক বাস, ব্রাম্মন্যবাদ ব্রাহ্মণকে দান করার মাহাত্ম , জাতিভেদ
প্রথা , বিবাহ সম্পর্কিত আর সুচিতাই প্রাধান্য পেয়েছে । সময়কাল বা বিশদ
আকার পাওয়া জায় নাই।
(১০) কাত্যায়ন সংহিতাঃ-
মহর্ষি গভিলের পুত্র , সুত্রকার , প্রসিদ্ধ বৈয়াকরন, তার আরেক নাম পারস্কর । মহারাজ নন্দের সম সাময়িক ।
কিন্তু
এই সংহিতা রচিত হয় খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে , এটা আইন গ্রন্থ রচনার
প্রথম দিকের সংহিতা । এতে মোট ২৯ তি খণ্ড। এখানে গনেশ ও মাতৃ পুজার কথা বলা
আছে । * জাতিভেদ প্রথার প্রচলন *ব্রাম্মন্য বাদ * পুরুষের বহু বিবাহ
*নারীকে গৃহ বন্দির ব্যাবস্থা * সতিদাহ প্রথার মারাত্মক রুপ দিয়েছে । মনু
সংহিতার মতই তবে এত বৃহৎ আকারে পাওয়া জায় নাই ।
এই সংহিতাকার কাত্যায়ন আর গভিলের পুত্র কাত্যায়ন কিভাবে এক হয় ? সময় হিসাব করলেই বুঝা যাবে।
(১১) বৃহস্পতি সংহিতা –
বৃহস্পতি
অঙ্গির পুত্র দেবগুরু , এটা খ্রিষ্ট পূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর রচনা , তাই সময়
হিসাব করলে সংহিতাকার বৃহস্পতি আর দেবগুরু বৃহস্পতি অবশ্যই এক নয়।
*দণ্ড
নীতির আলোচনা , বিচারপতির অভিমত নিয়ে রাজার দণ্ড দান, উত্তরাধিকার আইন যা
অনেকের ধারনা মতে পরবর্তীতে মিতাক্ষরা আইন প্রচলিত হয় * জাতিভেদ প্রথার
কড়াকড়ি * ৫ টা কারনে কোন নারী দ্বিতীয় বার বিয়ে কড়তে পারবে ।*
ব্রাম্মন্যবাদ জোরে সোরে প্রতিষ্ঠা* নারীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা*
সীমাহীন আচার বিচার। মনু সংহিতার মতই।
চলবে -----
(১২)পরাশর সংহিতাঃ-
পরাশর
বসিসটের পৌত্র শক্তির পুত্র , মন্ত্র দ্রষ্টা ঋষি , এটা খৃষ্টীয় ৮
শতাব্দীতে রচিত আইন গ্রন্থ তাই বৈদিক মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি পরাশর আর এই সংহিতা
রচয়িতা পরাশর অবশ্যই এক নন । কলিযুগে মানুষের আচরণীয় কর্তব্য সম্পর্কে
লেখা।
তার আইন গ্রন্থ মনু আর যাজ্ঞ বল্কের মতই বিশাল ১২ টা অধ্যায় ।
পরাশরের আইনের আশ্রয়েই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ আইন প্রবর্তন
করতে পেরেছিলেন। পরাশরের মতে সত্যযুগে মনুর আইন, ত্রেতা যুগে গৌতমের আইন ,
দ্বাপর যুগে শঙ্খ লিখিত আইন আর কলি যুগে পরাশর লিখিত আইনেই চলতে হবে ।
মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ধর্মীও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন কিভাবে
পালন করতে হবে তার সবই আছে। * প্রকট জাতিভেদ প্রথা * মহিলাদের দ্বারা
নানাভাবে পুত্র সন্তান উৎপাদন। *৫ টা কারণে মহিলারা দ্বিতীয় বিয়ে করতে
পারবে। * তার মতে কলিযুগে নারীর কাছে পুরুষ পরাস্ত হবে । * মেয়েদেরকে
বাল্য বিবাহ দিতে হবে বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া আছে নতুবা মা বাবা বড় ভাই
তিনই নরকগামী হবে।* যে সকল ব্রাম্মন বেদ জানে না, সন্ধ্যা উপাসনা জানে না,
গায়ত্রি জানে না ,অগ্নিতে হোম ক্রিয়া জানে না, কৃষি কাজ করে তারা নাম মাত্র
ব্রাম্মন। অর্থাৎ তার কথায় ব্রাম্মনের ঘরে জন্ম নিলেই সে জন্ম সুত্রে
ব্রাম্মন। * স্ত্রী ও ভুমি দুই এক রুপ তারা এক বারে দূষিত হয় না ।
*স্বামী
বিদেশ গেলে, মৃত্যু হলে বা স্বামী ছেড়ে দিলে যদি কোন নারী উপপতি কত্রিক
জারজ সন্তান নেয় তাইলে ঐ পতিত পাপকারিনি মহিলাকে ভিন্ন রাজ্যে পরিত্যাগ করে
আসবে। * নারী কোন ভাবেই দশ দিনের বেসি বাড়ির বাইরে থাকতে পারবে না, নইলে
তাকে নষ্টার শ্রেণীতে ফেলতে হবে।*বিপ্র গোমাংস বা চণ্ডাল অন্ন ভোজন করলে
প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।* যাজ্ঞ বল্কের মতই নানা জাতের পুত্র ।* প্রতি যুগে
যে যুগধর্ম নিদ্রিষট আছে , যে সকল দ্বিজ সেই ধর্মেই নিরত থাকেন তাদের
নিন্দা করা উচিৎ নয় কারন ব্রাহ্মণরাই যুগ রুপে অবতীর্ণ হইয়া থাকেন
(ব্রাম্মন্য প্রথার উগ্র রুপ যা সনাতন ধর্ম নষ্টের অন্যতম কারনের একটা)। *
যদি কেউ ব্রাম্মনের প্রতি হুঙ্কারতোলে ,তর্কে হারায় বা তৃণের দ্বারাও
তারনা করে,গলায় বস্ত্র দেয় তবে স্নান করে সারা দিন তার ব্রাহ্মণকে প্রনাম
দ্বারা অভিবাদন করে প্রসন্ন করতে হবে। * ব্রম্মা, বিষ্ণু , রুদ্র, সোম,
সূর্য , অনিল এরা সকলেই ব্রাহ্মণের দক্ষিণ কর্ণে বাস করেন।
পরাশর নারী নির্যাতন কম করলেও ব্রাম্মনদের জন্য তার দীনতার সীমা নাই , কোঠর জাতিভেদ প্রথার প্রবর্তক ।
(১৩)ব্যাস সংহিতাঃ-
ব্যাস
মহামুনি পরাশরের পুত্র মহাভারত রচয়িতা । কিন্তু এই সংহিতা প্রনেতা ব্যাস
কে কারন এই সংহিতা রচিত হয় তৃতীয় শতাব্দীতে । ৪ টা অধ্যায় (১) সংস্কার বিধি
(২) স্ত্রী লোকের আচার আচরন (৩) মানুষের নিত্য কর্ম (৪) দানের ফল ।
জাত
কর্ম থেকে শুরু করে কর্ণ ভেদ পর্যন্ত যে ৯ টা সংস্কার বিধি আছে তাতে
স্ত্রীলোকের মন্ত্র পাঠ নাই। শূদ্র জাতির ১০ টিতেই মন্ত্র পাঠ নাই ।
উপনয়নাদি ৬ টি সংস্কার স্ত্রী জাতি ও শূদ্র জাতির জন্য নিষিদ্ধ। * একজন
উচ্চ বর্ণের পুরুষ ইচ্ছা করলে সব জাতের নারী বিয়ে কড়তে পারবে। উচু বংশের
পুরুষ নিচু বংশের নারী যত ইচ্ছা বিএ করতে পারবে কিন্তু নিচু বংশের উচু
বংশের নারী বিয়ে করতে পারবে না। * মনু আর যাজ্ঞ বল্কের মত মেয়েদের নাম ,
রুপ,অংগ বাছাই করে বিয়ে করবে। * স্বামীর সাথে স্ত্রী দাসীর মত ব্যাবহার করে
চলবে।* স্বামী আদেশ দিলে স্ত্রী ভোজন করবে। * মৃত স্বামীর সাথে চিতায় গিয়ে
মরবে নাহয় আজীবন ব্রহ্মচর্য পালন করবে। * নারীগন কখনই অরক্ষিত থাকবে না ।
ব্রাহ্মণকে প্রতিদিন দান করতে হবে ।* বেদ না জানলে সে নামে মাত্র ব্রাম্মন
*নারীগন সারাদিন বাড়ির কাজ করবে,ব্যায় করবে না ।
ভয়ানক নারী বিদ্ধেসি , ব্রাম্মন্য বাদি , জাতিভেদ প্রথার প্রবর্তক ।
(১৪) শঙ্খ সংহিতাঃ- ১
শঙ্খ
মহাভারতে উল্লেখিত একজন ঋষি , তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানা জায় নাই। ১৮ টি
অধ্যায় (১) চার বর্ণের কাজ (২-৪) দশবিধ সংস্কার (৫-৭) গারহস্ত,
ব্রহ্মচর্য, বানপ্রস্ত আস্রমের আচার আচরন বিধি (৯-১০) শৌচ, সন্ধ্যা বিধি
(১১)জপ বিধি (১২) তর্পণ বিধি (১৩-১৪) দান ও দানের ফলাফল (১৫) অশৌচ বিধি
(১৬) দ্রব্যাদি সুদ্ধি (১৭) শ্রাদ্ধ (১৮) প্রায়শ্চিত্ত ।
• ব্রাম্মন,
ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এই তিন বর্ণের উপনয়ন হবে সুদ্রের না। * ব্রাম্মন মাঙ্গল্য
যুক্ত, ক্ষত্রিয় বল যুক্ত , বৈশ্য ধন যুক্ত আর শূদ্র জুগুস্পিত যুক্ত নাম
রাখতে হবে। * ব্রাম্মনের নামের পর শর্মা , ক্ষত্রীয়ের পরে বর্মা, বৈশ্যের
নামের পরে ধন ও শূদ্রের নামের পর দাস বলতে হবে । ( এটা জাত দিয়ে মানুষকে
নিগৃহীত করার ফন্দি)* বিপদে পরলেও দ্বিজগণ শূদ্র কন্যা বিয়ে করবে না।*
ব্রাম্মন পুরুষ শূদ্র ছাড়া সব বর্ণের কন্যা বিয়ে করতে পারবে । ক্ষত্রিয় ২
বর্ণের আর বৈশ্য ও শূদ্র শুধু তাদের জাতের কন্যা বিয়ে করতে
পারবে।*স্ত্রীলোকের প্রভু স্বামী আর সকল বর্ণের প্রভু ব্রাহ্মণ । * একমাত্র
স্বামী সেবাতেই স্ত্রীলোক স্বর্গ প্রাপ্ত হবে।* মুসলমানের অজু করার মত হাত
পা মুখ ধোবে । * কেউ তার থেকে নিচু জাতের ঘরে অন্ন ভোজন করবে না ।
• (১৫)লিখিত সংহিতাঃ-
•
শঙ্খ ঋষির ভাই লিখিত , তিনিও একজন ঋষি, মহাভারতে উল্লেখ আছে । তার
সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় নাই। মাত্র ৯২ টা শ্লোক পাওয়া গেছে। প্রথমেই
জলাশয় খননের মাহাত্ম * ৮ টি অধ্যায় , গয়া পিণ্ডি , বিভিন্ন ধরনের শ্রাদ্ধ,
প্রায়শ্চিত্ত, বিবাহ বিধি, শুদ্ধি এই বিষয়গুলিই আছে।* জাতি ভেদ প্রথা ,
নারী অবহেলা বিদ্যমান , এটা সম্ভবত সম্পূর্ণ পাওয়া যায় নাই ।
• (১৬) দক্ষ সংহিতাঃ-
*ব্রম্মার
মানস পুত্র দক্ষ কিন্তু এই সংহিতা প্রনেতা দক্ষের কোন পরিচয় পাওয়া যায়
নাই। ৭ টা অধ্যায় (১-২) দ্বিজ গনের নিত্য কর্ম মানুষের কাজ ভাগ (৩)
গৃহস্থের কাজ (৪) স্ত্রীলোকের কাজ ও কর্তব্য (৫) শৌচ (৬) অশৌচ (৭) ইন্দ্রিয়
বিজয়
• *জাতিভেদ প্রথা না মানলে কি কি পাপের ভাগি হবে * অন্যান্যদের
মতই ব্রাম্মন ক্ষত্রিয় বৈশ্যের উপনয়ন হবে , এরা ধর্ম কর্ম করবে আর শূদ্ররা
এদের সেবা করবে।* স্ত্রীলোক স্বামীর বশে থাকবে , স্ত্রীলোককে যতই
অলঙ্কারাদি দিয়ে রাখা হোক না কেন তারা সর্বদাই পুরুষগণের রক্ত শোষণ করে। *
পুরুষ যতই বিয়ে করুক তার প্রথম স্ত্রীই ধর্ম পত্নি হবে* যে স্ত্রী সহমরনে
যাবে সে স্বর্গ বাসী হবে। * স্ত্রী জাতি সর্বদা হাসি মুখে থাকবে , ব্যয়
করবে না , সারাদিন বাড়ির কাজ করবে ।
• (১৭) গৌতম সংহিতাঃ-
• ন্যায়
সুত্রকার অক্ষপাদের নাম গৌতম , মন্ত্র দ্রষ্টা গোত্র প্ররতক , অহল্যার
স্বামী , ঋষি দীর্ঘতমার নামও গৌতম , ঋষি ভরদ্বাজের নামও ছিল গৌতম । গৌতমের
ন্যায়সুত্র আর সংহিতার মধ্যে অমিল অনেক । তাই এই সংহিতা প্রণেতা গৌতম
•
কে ? তার প্রনিত আইনে ২৯ টা অধ্যায় (১)ব্রাম্মনের বেশ ভূষণ (২) নিষিদ্ধ ও
নিত্য কার্যাবলী (৩)চতুরাশ্রমের বিবরন (৪) বর্ণ সঙ্কর উৎপত্তি (৫)
বেদাধ্যয়ন (৬) স্নাতক ব্রতাবলম্বির কার্যাবলী (৭) বর্ণ ভেদ (৮) কাজ ভেদ
(৯) দণ্ড বিধি (১০)অশৌচ ও শ্রাদ্ধবিধি (১১) অনধ্যায় (১২) অভক্য নিরূপণ
(১৩) স্ত্রী কর্তব্য (১৪) পাপ ও তদনুসারে রোগ (১৫) সংসর্গ নিরূপণ (১৬)
প্রায়শ্চিত্ত (১৭) দায়ভাগ , এই ১৭ টা বিষয় নিয়ে ২৯ টা অধ্যায়ে লেখা হয়েছে ।
* ব্রাম্মনাদি চার বর্ণের সমাগমে যথাক্রমে কুশল , অনাময়, ক্ষেম এবং আরোগ্য
প্রশ্ন করবে । ( এখানে বুঝা যায় মুসলমানরা অমুসলিমদের যে সম্ভাষণ করে সে
রকম) * শূদ্র ও অব্রাহ্মণের অথিতি নাই , অব্রাম্মন যদি যজ্ঞে আমন্ত্রিত হয়
ক্ষত্রীয়ের পর ভজন করাবে , ব্রাম্মন ভিন্ন অপর জাতিকে দয়া পরবশ হয়ে ভৃত্যের
সাথে ভোজন করাবে । * মূর্খদের সভায় আর স্ত্রী পুরুষের মিলন স্থানে
নমস্কারের কোন নিয়ম নাই * ব্রাম্মন ভিন্ন অন্য পুরবাসীকে অভিবাদন করিবে না *
উচ্চ জাতি বয়সে ছোট হলেও শূদ্র তাকে অভিবাদন করবে * শূদ্র শ্রেষ্ঠ জাতির
নাম রাখবে না , রাজার নাম কেউ গ্রহন করবে না * বিপদে পরলে অন্য জাতির নিকট
থেকে বিদ্যা শিক্ষা নিতে পারবে * স্নাতক ব্রাম্মন ম্লেচ্ছ, অন্ত্যজ ও
অধার্মিকের সাথে কথা বলবে না * অলংকারে সজ্জিত না হলে ঐ স্ত্রীর সাথে রমণ
করবেনা , স্ত্রীর সাথে ভোজন করবে না, স্ত্রী সাজার সময় দেখবে না, * দ্বিজ
মাত্রেই অধ্যয়ন, যজ্ঞ, দান এই তিনটার অধিকার আছে, * সংগ্রাম লব্ধ ধনে
বিজয়ীরই অধিকার ( গনিমতের মাল ?) বাহন ও উদ্বৃত্ত ধনে রাজা অধিকারী * প্রজা
মাত্রই রাজাকে কর দিতে বাধ্য * পশু ও স্বর্ণের পঞ্চাশ ভাগ কর দিবে ( জাকাত
?) কৃষকেরা আয়ের দশ , আট বা ছয় অংশ কর দিবে *দ্রব্যের খরিদ অপেক্ষা বাজার
দর নরম হলে বনিকেরা রাজ কর দিবে না * অধিকলব্ধ বস্তুতে কেবল ব্রাহ্মণেরই
অধিকার , বিজয় দ্বারা লব্ধ বস্তুতে ক্ষত্রীয়ের অধিকার , বানিজ্য দ্বারা
লব্ধ বস্তুতে বৈশ্য আর দাস বৃত্তি হলে লব্ধ বস্তুতেই সুধু সুদ্রের অধিকার
।* ভুমি গর্ভে সঞ্চিত ধন যদি ব্রাম্মন পায় তবে সেটাতে রাজার অধিকার থাকবে
না * রাজা ব্রাম্মন ছাড়া সকলের প্রভু * ব্রাম্মন ভিন্ন সকলে উচ্চাসনে বসা
রাজাকে অধস্থিত হয়ে উপাসনা করবে * কঠিন বিচার কাজে রাজা ব্রাম্মনের মতামত
নিবেন
• ( মুল্লা তন্ত্র?) * শূদ্র কোন দ্বিজাতির প্রতি তিরস্কার করে
আঘাত করে তবে তার সেই অঙ্গ রাজা কেটে ফেলবে * দ্বিজাতির স্ত্রীর সাথে
শূদ্র সংসর্গ করলে রাজা ঐ শূদ্রের লিঙ্গচ্ছেদের বিধান দেবেন ( শরিয়া আইন) *
শূদ্র যদি বেদ শ্রবণ করে রাজা সীসা এবং জৌ গলাইয়া তার কানে ঢেলে কান বন্ধ
করে দেবে , বেদ মন্ত্র উচ্চারন করলে তার জিহ্বা কেটে ফেলবে বেদ মন্ত্র
অঙ্গে ধারন করলে সেই অঙ্গের ভেদ করবে ( কোঠর দাস প্রথা) * দ্রব্যের পরিমাপ ,
বন্ধক , ঋণ , সুদ, চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ ( ব্যাঙ্কিং) জামিন লাভ প্রভৃতির
উল্লেখে বুঝা যায় এটা নিকট অতীতের বৈদিক যুগের নয় । * পশু , ভুমি ও দাসী
প্রভৃতি স্ত্রীর অত্যন্ত ভোগ না হলে এতে ভোক্তার আর অধিকার থাকে না *
ব্রাম্মনের শারীরিক দণ্ড নাই * অব্রাহ্মণের বাক্য অপেক্ষা ব্রাম্মনের কথার
মুল্য বেশী দিতে হবে * চোর, ক্লিব , পতিত , নাস্তিক, স্ত্রী যাজক ইত্যাদি
এদেরকে স্রাদ্ধে ভোজন করাবে না * স্ত্রী কখনো স্বামীকে অতিক্রম করবে না ,
কখনো স্বাধীন হবে না * স্বামীর মৃত্যু হলে বাক , চক্ষু ও কর্মে সংযমী হয়ে
আপন দেবর থেকে সন্তান লাভে অভিলাষী হবে , আপন দেবর না থাকলে সপিণ্ড বা
সমগোত্রীয় দেবর * ঋতু দর্শনের পূর্বে কন্যা দান না করলে অভিভাবক পাপী হবে ,
না হলে কুমারী ৩ ঋতু অতিক্রম করলে পিতৃ দত্ত অলঙ্কার পরিত্যাগ করে স্বয়ং
কোন আনন্দিত পাত্রের সাথে যুক্ত হবে * কোন উত্তম বর্ণের স্ত্রী অধম বর্ণের
পুরুষের সাথে ব্যাভিচার করলে রাজা তাকে প্রকাশ্যে কুকুর দিয়ে খাওাবেন *
পিতার মৃত্যুর পর পুত্রেরা পিতার ধন ভাগ করে নেবে* অবিবাহিত ও অপ্রতিষ্ঠিত
কন্যারা মার স্ত্রিধন পাবে * অনপত্যের ধন স্ত্রীর হবে * মনু যাজ্ঞ বল্কের
মত বিভিন্ন উপায়ে পুত্র লাভের উল্লেখ আছে *
• (১৮) শতাতপ সংহিতাঃ-
•
একজন মুনি তার আর কোন পরিচয় পাওয়া যায় নাই । ৪ টা অধ্যায় পাওয়া গেছে (১)
পাপ অনুসারে রোগের উৎপত্তি (২) প্রায়শ্চিত্ত (৩) পাতকানুজায়ী মৃত্যু (৪)
দৈব নিহত ব্যাক্তির উদ্ধারের জন্য দান * জগন্নাথ ও বাসুদেব , শ্রী কৃষ্ণের
মূর্তি তৈরি করে পুজার উল্লেখ * দ্রব্যের পরিমাপক পল * ব্রাহ্মণকে বস্ত্র ,
গাভী সোনা রূপা , রত্ন , ভুমি সব কিছুই দান করা * ৬ নিষ্ক দ্বারা ধন দাতা
কুবেরের পুজা করে ব্রাহ্মণকে ২০ নিষ্ক দক্ষিণা দেবার কথা * সন্তান শূন্য
অবস্থায় কেউ মারা গেলে তার আত্মার সদ্গতি হয় না। * পরিমাপের ব্যাবহার *
গুটি পোকা দিয়ে কাপড় তৈরির কথাও বলা আছে । এতে রাম্মনকে দানের জন্যই আকুলতা
বেশী ।
• (১৯) বশিষ্ঠ সংহিতাঃ-
• রামায়ন , মহাভারত , পুরান ,
ব্রম্মার মানস পুত্র , সপ্তর্ষির একজন , ঋক বেদের সপ্তম মণ্ডলের ঋষি অনেক
যুগ ধরেই এই নাম ব্যবহার হয়ে আসছে , তবে এই আইন প্রনেতা বসিষ্ঠ কে ?
• ২০ টা বিষয় নিয়ে এই আইন তৈরি হয় , (১) ধর্ম নিরূপণ (২) রাজার কর গ্রহন (৩) ব্রাম্মনের নিষিদ্ধ কাজ (৪)সুদ নির্ধারণ
•
(৫) দ্রব্যের সুদ্ধ্যশুদ্ধি নিরূপণ (৬) সপিণ্ড নিরূপণ (৭) অশৌচ বিধি (৮)
রজঃস্বলা স্ত্রীর নিষিদ্ধ কাজ (৯) প্ররিব্রাজকের কাজ (১০) শ্রাদ্ধে
ব্রাম্মন ভোজন (১১) উপনয়ন কাল (১২) স্নাতক ব্রত (১৩) অনধ্যায় (১৪)
খাদ্যাখাদ্যের নিষেধ (১৫) দত্তক পুত্র বিধি (১৬) ব্যবহার (আইন বিষয়) (১৭)
১২ ধরনের পুত্র নিরূপণ (১৮) দায়ভাগ (১৯) রাজকার্য (২০) প্রায়শ্চিত্ত ।
• *হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ও বিন্ধ পর্বতের উত্তর ভাগে যে সকল ধর্ম ও আচার প্রচলিত আছে সেগুলিকেই ধর্ম মানতে হবে
•
কেননা অন্যগুলি অতিশয় গর্হিত ধর্ম গঙ্গা যমুনার মধ্য বর্তী স্থানকে
আরজাবরত বলা হয়। বেদে স্পষ্ট না থাকায় মনু জাতধর্ম, দেশ ধর্ম , কুল ধর্ম
সম্পর্কে বলে গেছেন * বিদ্যা নষ্ট হলে পুনরায় পাওয়া যায় কিন্তু জাত নষ্ট
হলে সর্বনাশ * বংশ মর্যাদা বলে অশ্বও সম্মানীয় অতএব সৎ বংশীয় রমণীকে বিয়ে
করবে * তিন বর্ণই ব্রাম্মনের বশে থাকবে , ব্রাম্মন তাদের যে উপদেশ দিবেন
রাজা তা প্রচলিত করবেন * ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য সব প্রজাই রাজাকে ষষ্ঠ-ষষ্ঠ
অংশ কর দেবে , ব্রাহ্মণই দেবের আদি প্রকাশক , ব্রাহ্মণই আপত হতে উদ্ধার
করেন, অতএব ব্রাম্মন অনাদি ও কর গ্রহনের অযোগ্য , চন্দ্র ব্রাম্মনের রাজা
*বিনিময় প্রথা * নারী জাতিকে বাল্য অবস্থায় পিতা, যৌবনে স্বামী আর বৃদ্ধ
অবস্থায় পুত্র রক্ষক হয় , স্ত্রীলোক কদাচ স্বাধীন হতে পারবে না * প্রস্রাব
পায়খানা করলে মাটি ব্যাবহার করবে (মুসলমানের মতই নিয়ম ) * ম্লেচ্ছ ভাষা
শিখবে না * এক অক্ষর ওম ই শ্রেষ্ঠ বেদ, প্রাণায়ামই শ্রেষ্ঠ তপস্যা *
স্ত্রীর সাথে একত্রে ভোজন করবে না * স্ত্রীলোক পর পুরুষের সংসর্গীনি হইলেই
পতিত হয় , অতএব স্বামী পুরুসান্তরের অনুপভুক্ত অন্য স্ত্রী গ্রহন করতে
পারবে * দেবগন যার গৃহে উপপতি আছে আর স্ত্রিজিত ব্যক্তির ঘরে অন্ন গ্রহন
করেন না * চিকিৎসক, শল্যধারি ,ক্লিব ইত্যাদি এদের ভিক্ষাও অগ্রাহ্য *
স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীলোক দান বা প্রতিগ্রহ করবে না * রাজার মন্ত্রি
সভার কাজ করবেন, * দলিল , সাক্ষী ও ভোগ (দখল)এই তিন দেখাতে পারলেই ধনি ধন
পাবে * ঘর এবং ক্ষেত নিয়ে বিরোধে সামন্তদের কথা বিশ্বাস করতে হবে , সামন্ত
দের বিরোধে দলিল বিশাস করতে হবে * দশ বৎসর দখলে থাকলেই দখল স্বত্ব প্রমান
*স্ত্রীলোকের জন্য স্ত্রীলোক সাক্ষী, দ্বিজের জন্য দ্বিজ , শূদ্রের জন্য
শূদ্র , অন্ত্যজ জাতির জন্য অন্ত্যজ * পুত্রবানদের জন্য অনন্তলোক শ্রুতি
আছে অপুত্রের জন্য লোকাধিকার নাই *যে নারী ক্লিব , পতিত,উন্মত্ত স্বামী
পরিত্যাগ করে বা স্বামী মরনে অন্য স্বামী আশ্রয় করে সে পুনর্ভূ * কন্যা
ঋতুমতী হবার আগেই দান করতে হবে নাহলে পাপ , ঋতুমতী হয়ে গেলে কন্যা নিজেই
স্বামী নিবে * ব্রাম্মন পুরোহিতরাই রাজ্য রক্ষা করেন অতএব রাজা পুরহিতকে
দান করবেন
• * রাজা বরফের কর নেবেনা কারন বরফ অস্থায়ি* শিশু ও
ভিক্ষুকের জন্য কর নাই *নিচ জাতের পুরুষ উচু জাতের নারীর সঙ্গে দৈহিক
সম্পর্ক করলে ঐ নারীকে মাথা ন্যারা করে তাকে উলঙ্গ করে সারা গায়ে ঘি মেখে
গরুর গারি বা গরধভের পিঠে চড়িয়ে মহাপথে ছেরে দেবে আর ওই পুরুষকে লোহার শিকল
দিয়ে বেধে আগুনে ছেরে দেবে ( এটা কি ইসলামি আইনকেও হার মানাচ্ছে না ?)।
রামায়ণ , মহাভারত আর ঋক বেদের সময় কাল আর দলিল লেখার সময়কাল অবশ্যই এক নয়
।তাই বলছি এটা কোন বশিষ্ঠ ? সে কে ?
রেফারেন্স বই – ঊন বংশ সনহিতা
পঞ্চানন তর্করত্ন
(২) মনু সংহিতা -----
মনু
স্মৃতির মতে ব্রম্মা নিজ দেহকে দুই ভাগ করলেন, একভাগ পুরুষ অপর ভাগ নারী ,
সেই নারী থেকে সৃষ্টি করলেন বিরাজ , এই বিরাজ তপস্যা করে একটা পুরুষ
সৃষ্টি করলেন , এই পুরুষই মনু সংহিতার প্রবক্তা মনু। সংখ্যা কারিকার (২৫)
মতে মনু ব্রম্মার অবতারনা করেছেন।
মনুর ক্ষতিকর কিছু আইন ---- * কারো
সাথে দেখা হলে , ব্রাহ্মণকে কুশল , ক্ষত্রিয়কে অনাময়, বৈশ্যকে ক্ষেম ও
শূদ্রকে আরোগ্য বলতে হবে ( মুসলমানের আদাব সালাম)।* নারী স্বভাবই হল
পুরুষদের দূষিত করা । বিদ্বান অবিদ্বান ব্যাক্তিকে স্ত্রীলোক বিপথে নিতে
পারে । * মা , বোন বা মেয়ের সঙ্গে শুন্য গৃহাদিতে পুরুষ থাকবে না। যদি
স্ত্রীলোক বা সুদ্র কোন মঙ্গল কাজ করে , তাইলে ব্রহ্মচারী সেই সব কাজ কর্ম
মনোযোগী হয়ে করবে। * স্ত্রী , রত্ন , বিদ্যা , ধর্ম ,শুচিতা,হিতকথা ও নানা
বিধ শিল্প কর্ম সকলের থেকে গ্রহনীয়। * কপিল বর্ণা, অধিকাঙ্গ বিশিষ্ট , রোগ
গ্রস্থা, লোমহীন বা অধিক লোমি, বাচাল, পিঙ্গল বর্না , নক্ষত্র , বৃক্ষ,
নদী, পর্বত, পক্ষী , সর্প, দাস এইগুলির নামধারি বা ভীতিজনক নাম যুক্তা
কন্যাকে বিয়ে করা নিষেধ। * যে কন্যার ভাই নাই , পিতা অজ্ঞাত ,
বিজ্ঞব্যাক্তি পুত্রিকা ধর্মশঙ্কায় তাকে বিয়ে করা নিষেধ। * স্ত্রীর সঙ্গে
আহার , স্ত্রীর আহার কালে দেখা নিষেধ। * স্ত্রীর হাচি , হাই তোলা বা আরাম
করে বা অসংযত ভাবে বসা – দেখা স্বামীর নিষেধ। * যজ্ঞে স্ত্রী বা ক্লিব হোম
করলে অনধীতবেদ ব্রাম্মন ভুজন করবে না । * চিকিৎসক, ব্যাভিচারি নারী ,
কুসিদজীবী ও লোহা বিক্রেতার অন্ন যথাক্রমে পুজ,শুক্র, বিষ্ঠা , মল, ভোজনের
তুল্য।
স্ত্রীর কর্ম – * বাড়িতেও বালিকা, যুবতি বা বৃদ্ধা নারী
স্বাধীনভাবে কিছু করবেনা। * (পিতা রক্ষতি কৌমারে,ভর্তা রক্ষতি যৌবনে,
রক্ষতি স্থবিরে পুত্রা , ন স্ত্রী সবাতন্ত্রমরহতি ) বাল্যকালে পিতা, যৌবনে
পতি ও পতি মৃত হলে বা বার্ধক্যে পুত্রদের অধীনে থাকবে, স্ত্রীলোক কখনোই
স্বাধীন থাকবে না। * স্ত্রীলোক সদা আনন্দিত ও গৃহ কর্মে দক্ষ হবেন। ঘর বাড়ি
পরিস্কার রাখবে , জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখবে,মিতব্যায়ী হবে। * কখনই
পিতা,পতি বা পুত্রের সাথে বিচ্ছেদ কামনা করবে না। * স্ত্রী লোককে পিতা বা
পিতার অনুমতিক্রমে তার ভাই জার কাছে সম্প্রদান করবে , তাকে জিবিতাবস্তায়
সেবা করবে , মারা গেলে ( ব্যভিচারি দ্বারা বা শ্রাদ্ধ তর্পণ না করে ) তাকে
অপমানিত করবে না।* বিয়ের সময় যে প্রজাপতি যজ্ঞ করা হয় তা কন্যার উপর
স্বামিত্ব জনক।* পতি দুশ্চরিত্র, কামুক বা গুনহীন হলেও তিনি সাধ্বী স্ত্রী
কত্রিক সর্বদা দেবতার ন্যায় সেব্য। * পতির থেকে সতন্ত্র ভাবে স্ত্রীলোকের
যজ্ঞ, ব্রত বা উপবাস নাই। তিনি যে পতিসেবা করেন তাতেই স্বর্গে তিনি পুজিতা
হন। * পতিলোক কামী সাধ্বী নারী জীবিত বা মৃত পতির অপ্রিয় কিছু করবে না। *
স্ত্রী বরং পবিত্র ফলমুল খেয়ে দেহ ক্ষয় করবেন, তথাপি পতির মৃত্যুর পর
অন্যের নাম উচ্চারন করবেন না। * অন্য পুরুষ কত্রিক উৎপন্ন সন্তানের মালিক
স্ত্রী নন, পরস্ত্রী গামি পুরুষেরও নয় , কখনও সাধ্বী নারীর দ্বিতীয় পতি
উপদিষ্ট হয় না। * যে নারী নিজের নিকৃষ্ট পতি ত্যাগ করে উৎকৃষ্ট ব্যাক্তির
ভজনা করে , সে পৃথিবীতে নিন্দনীয় হয় আর পরপূর্বা সংজ্ঞায় অভিহিত হন। *
স্ত্রী স্বামীকে অবহেলা করলে ব্যাভিচারি হলে সংসারে নিন্দনীয় হয় , শৃগালের
জন্ম প্রাপ্ত হয় , যক্ষ্মা, কুসট পাপ রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়, * কায়মন
বাক্যে যে নারী পতিকে লঙ্ঘন করে সে পতিলক প্রাপ্ত হয় এবং সজ্জন দ্বারা
সাধ্বী বলে পুজিত হয়। * কায়মন বাক্যে সংযত হয়ে এই নারী ধর্ম পালন করলে
স্ত্রীলোক ইহলোকে শ্রেষ্ঠ কীর্তি , পরলোকে পতিলোক প্রাপ্ত হয়। ( পতিলোক ?
কোথায় ?) * স্বামীর আগে স্ত্রী মারা গেলে স্বামী পুনরায় বিয়ে করবে।
রাজতন্ত্র ---- বিভিন্ন শাস্তি ...............
আইন
– স্ত্রীলোকের সাক্ষী স্ত্রীলোক দিবে, দ্বিজের সাক্ষী হবে দ্বিজ , সুদ্র
হবে সুদ্রের সাক্ষী , চণ্ডাল হবে চণ্ডালের সাক্ষী । এটা জাতিভেদ প্রথার
মাধ্যমে বিভেদ সৃষ্টিকারী আইন । * স্ত্রী , পুত্র , দাস , মিস্র , সহোদর
ভাই অপরাধ করলে রজু বা বংশ দণ্ড দিয়ে আঘাত করতে হবে ।* স্ত্রীলোক বিশেষ
ভাবে রক্ষণীয় , অরক্ষণীয় স্ত্রীলোক পিতৃ মাতৃ উভয় কুলের দুঃখ জন্মায়। * সকল
বর্ণের এই উৎকৃষ্ট ধর্ম লক্ষ করে দুর্বল পতিগণও স্ত্রীকে রক্ষা করতে
চেষ্টা করেন। * স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ( শুক্র রুপে) প্রবেশ করে । *অর্থের
সংগ্রহ , ব্যয় , শুদ্ধি, ধরম, অন্নপাক ও শয্যা পরিদর্শনে স্ত্রীকে নিযুক্ত
করবে। * মদ্যপান , দুষ্ট লোকের সংসরগ, স্বামীর সঙ্গে ছারাছারি, ঘোরে বেড়ানো
, অসময়ে নিদ্রা, পরগৃহে বাস এই ছয়টি নারীর ব্যাভিচারি দোষের কারন। এরা রুপ
বিচার করে না, বয়স দেখেনা, রুপবান বা পুরুষ মাত্রেই তার সঙ্গে ভোগ করে
তারা ব্যাভিচারি কুকর্ম করে । * ব্রম্মা কত্রিক এদের এরুপ
স্বভাব সৃষ্ট
যেনে পুরুষ (স্ত্রীলোকের) রক্ষা বিষয়ে অতি যত্ন অবলম্বন করবে। * শয়ন ,
উপবেশন, অলংকার, কাম, ক্রোধ, কুটিলতা , পরহিংসা , মন্দ আচরন এইগুলি
স্ত্রীলোক স্বভাব গত করে মনু সৃষ্টি করেছিলেন। * স্ত্রীলোকের মন্ত্র সহকারে
সংস্কার নাই – এটা ধর্ম বিহিত। এরা ধর্মজ্ঞ নয়, মন্ত্রহীন এবং মিথ্যার
ন্যার (অশুভ) – এই শাস্ত্রের নিয়ম। * নারী ক্ষেত্র স্বরূপ , পুরুষ বীজ
স্বরূপ।
নারীর আপদধর্ম – * আপদকালে ভিন্ন নিযুক্ত হয়েও বড় ভাই বা ছোট ভাই একে অন্যের স্ত্রীতে গমন করলে পতিত হবে।
*সন্তানের
অভাবে গুরুজনের সম্মতিতে স্ত্রীলোক দেবর বা সপিণ্ড থেকে সন্তান লাভ করবে।
* বিধবাতে নিযুক্ত ব্যক্তি ঘৃতাক্ত দেহে মৌনী হয়ে রাত্রি বেলা একটি পুত্র
উৎপাদন করবে, দ্বিতীয় পুত্র কখনই না। *অন্য পুরুষে নিজুক্তা নারী সনাতন
ধর্ম নষ্ট করে । বিবাহ বিধায়ক শাস্ত্রে বিধবার পুনরায় বিবাহ উক্ত হয়নি (তা
পশুধর্ম , অধার্মিক) । বেন রাজার রাজত্ত কালে এই প্রথা অনুমোদিত হয়েছিল।
*স্ত্রীর জীবিকার ব্যবস্থা না করে স্বামী বিদেশে গেলে স্ত্রী সুতা কাটা ,
শুদ্ধ শিল্প কর্ম দ্বারা জীবন ধারন করবে। *যে স্ত্রী দ্যূতক্রীড়া ,
মদ্যপান,মত্ত,অসুস্থ(স্বামী সেবা করতে না পারে), অবজ্ঞা করে-তাকে স্বামী
অলংকার ও বস্ত্রাদি থেকে বঞ্চিত করে তিনমাস পর্যন্ত পরিত্যাগ করবেন (সহবাস
করবে না)। এটা কুরানের সুরা নিসার মত হুবহু।
* যে স্ত্রী নিবারিতা হয়ে
বিবাহাদি উৎসবে মদ পান করে বা নৃত্য অনুষ্ঠানে , লোক সমাজে যান তিনি ছয়
কৃষ্ণল দণ্ডনীয়া । (এটা কি দোররা নয় )। * সকল বর্ণের পতির শরীর শুশ্রূষা ও
নিত্য কর্ম সবর্ণ স্ত্রী করবেন। *কন্যা বিবাহ জুগ্য না হলেও সবর্ণ পাত্রের
কাছে বিধি অনুসারে সম্প্রদান করবে।* স্বয়ম্বরা কন্যা মা, বাবা, ভাই কারো
থেকে অলঙ্কার গ্রহন করলে সে চোর হবে । * ৩০ বৎসরের পুরুষ ১২ বৎ, মেয়ে, ২৪
বৎসরের ছেলে ৮ বৎসরের মেয়ে বিয়ে করবে। (মুহম্মদের নীতি) * পতি দেবতা
কত্রিক দত্ত স্ত্রী লাভ করবে নিজের ইচ্ছায় নয়। * সন্তান জন্ম দেবার জন্য
স্ত্রীলোক আর সন্তান উৎপাদনের জন্য পুরুষ সৃষ্ট হয়েছে । সেই হেতু
(অস্নাধানাদি ) সাধারন বেদে পত্নি সহ করনীয় বলা হয়েছে। * তিন বর্ণের
দ্বিজগণ নিজ ধর্মে রত হয়ে বেদ অধ্যয়ন করবেন , এদের মধ্যে শুধু ব্রাম্মন
অধ্যাপনা করবেন । * স্ত্রীলোকের জন্য পতিসেবা ব্রহ্মচর্যাশ্রমে গুরুগৃহে
বাসের তুল্য * শূদ্র দ্বিজকে প্রহার করলে হাত কেটে ফেলা পা দিয়ে লাথি মারলে
পা কেটে ফেলা এক কথায় শূদ্রের জন্য কোঠর সব শাস্তি * শূদ্রের তপস্যাই
হচ্ছে সেবা করা * মনু ৭ প্রকার দাসের কথা উল্লেখ করেছেন ১। যুদ্ধে পরাজিত
২। ক্রীতদাসীর পুত্র ৩। ভক্তদাস ৪। ক্রীত দাস ৫। অপর ব্যাক্তি কত্রিক
প্রদত্ত ৬। পৈতৃক সুত্রে প্রাপ্ত ৭। ক্ষতিপূরণ দিতে না পারার কারনে দাসত্ব
বরন করা
দাসের নিজস্ব কোন সম্পত্তি রাখার কোন অধিকার ছিল না , ব্রাম্মন দাস সুদ্রের সম্পদ অবাধে নিজের কাজে ব্যয় করবে।
*মনু
চণ্ডালদের অস্পৃশ্যদের মধ্যে নিকৃষ্টতম বলেছেন * মনু নানা ধরনের পুত্রের
উল্লেখ করেছেন * যে অধিবিন্না নারী রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় তাকে
সঙ্গে সঙ্গে দড়ি প্রভৃতি দিয়ে বেধে রাখতে হবে নাহয় পিতার সামনে তাকে ত্যাগ
করতে হবে ।
*পুত্র পিতাকে পুং নামক নরক থেকে উদ্ধার করে তাই ব্রম্মা স্বয়ং তাকে পুত্র বলেছেন
মনুর সময়কাল ২০০ খ্রিঃ পু -২০০ খ্রিঃ –কে এই মনু
রেফারেন্স বই – মনু সংহিতা
সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
বিশ্লেষণ
ব্রাম্মন,
ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এই তিন বর্ণ দ্বিজাতি তাদের প্রথম জন্ম মাতৃ গর্ভে
দ্বিতীয় জন্ম উপনয়নে , ব্রাম্মনের কাজ । বিরাট পুরুষের মুখ ব্রাম্মন , বাহু
ক্ষত্রিয় , উরুদ্বয় বৈশ্য আর শূদ্র চরন যুগল হতে উৎপন্ন এটাই জানবে ।
দ্বিজ-প্রত্যেক সংহিতা প্রনেতাই বলেছেন ব্রাম্মন , ক্ষত্রিয় , বৈশ্য এই তিন
জাতির উপনয়ন করতে কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় উপনয়ন প্রথায় শুধু ব্রাহ্মণদের
এক চেটিয়া অধিকার । রজঃস্বলা – এটা মেয়েদের মেয়েদের প্রাকৃতিক একটা দৈহিক
নিয়ম এটা নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি কেন তার কোন তাৎপর্য বোধগম্য নয় , কোঠর জাতিভেদ
প্রথা- এর ফলে সমাজের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অবহেলা আর নির্যাতনের মধ্যে ফেলা
হয় যার ফলে নিজেদেরকে মানুষ হিসাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তারা যখন যে ধর্ম
মতবাদ তাদেরকে মানুষ হিসাবে গ্রহন করবে বলে ডাক দিয়েছে তখনই দলে দলে তাদের
ধর্ম গ্রহন করেছে । উচু জাত নিচু জাতের ঘরে খাবে না - উচু জাত নিচু জাতের
ঘরে খেলে তাকে সমাজ চ্যুত করা এর ভয়াবহ পরিনতি আজ সুস্থ মনের হিন্দু
মাত্রেই হারে হারে টের পাচ্ছে ,কনে দেখা – বিয়ের সময় কনে দেখার নামে হাটে
গিয়ে গরু বাছাই একই পর্যায়ের , এটা মেয়েদেরকে অপমানিত করার মারাত্মক ধরন ।
খাদ্য গ্রহন নিসিদ্ধ – খাদ্যের মধ্যে এতো বেশি নিষেধাজ্ঞা আর সেটা কেউ কোন
কারনে পালন করতে না পারলে সমাজচ্যুত করা এর বিভীষিকাময় ফলাফল দেখা যায় যখন
এদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয় । তাদের কথায় ঘ্রাণেই অর্ধেক ভোজন তাই কোথাও
গরুর মাংস রান্না হলে সেটার গন্ধ কোন হিন্দুর নাকে গেলেই তাকে বিদায় , যার
ফল আজ বিশ্ব হিন্দু শূন্য হবার পথে । এর ধারাবাহিকতা আজও চলছে , কেউ বলছে
নিরামিষ না খেলে হিন্দু ধর্ম পালন করা যায় না , কেউ বলছে অন্য কারো হাতের
রান্না খাবে না , কেউ বলছে গরুর মাংস খেলে আর হিন্দু থাকা যায় না । সনাতন
ধর্ম তো কারো কেনা সম্পত্তি নয় এটা বিশ্ব জনীন , এই খাবারের নিষেধাজ্ঞা
মেনেই যদি হিন্দু ধর্ম পালন করতে হয় নইলে না , তাহলে যে সব দেশে শাক সবজি
উৎপাদন হয় না তারা কি হিন্দু ধর্ম পালন করতে পারবেনা ? এতে করে কি ধর্মটাকে
গণ্ডির ভেতর আবদ্ধ করে রাখা নয় ? এই গণ্ডি বদ্ধ করে রাখার ফলেই আজ সাড়া
বিশ্ব হিন্দু শূন্য হবার উপক্রম । ---- সংহিতা মুলত আইন গ্রন্থ , মুলত এই
সংহিতা প্রণেতারা ব্রাম্মন্য বাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কুরানের মত আইনকে
ধর্মীয় বিধান বলে মানুষকে ভয়ের মধ্যে রেখে তা পালন করতে বাধ্য করায় ।
রাজাকে ধর্মের ভয় দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করাই ছিল এদের মুল
উদ্দেশ্য , এরা ছিল অলস পরবিত্ত লোভী । এরা অলস ছিল বলেই শূদ্রদেরকে
অমানুষের শ্রেণীতে রাখে , ধর্মের দোহাই , নরকের ভয় দেখিয়ে এদেরকে অমানবিক
সব আইন দিয়ে আটকে রাখে যাতে তারা কোনদিন মাথা তুলতে না পারে , তাই শূদ্র
আর নারীকে এক পর্যায়ে রাখে তাদের লেখা পড়া বন্ধ করে দেয় আসলে তারা এই বৃহৎ
জনগুষ্টিকে ভয় পেত তারা জানত যে এরা সত্যি জানতে পারলে এই বংশানুক্রমিক
ব্রাম্মন্য বাদের বারোটা বাজাবে , তাই তাদের এইভাবে পঙ্গু করে রাখে ।
চলমান ----
হিন্দু
ধর্মের পতনের কারন ----- এই সকল মনুবাদির দলের কারনে হিন্দু সমাজে সতীদাহ
প্রথা চালু হয় আর তা এমন এক পর্যায়ে যায় যে বিভিশিখা রূপ ধারন করে কত লক্ষ
কোটি জীবন্ত নারীকে যে এভাবে হত্যা করা হয়েছে তার হিসাব নাই এই পৈশাচিকতার
এখন দেখি যে নারী দায় আমাদেরকে আজো বহন করে বেড়াতে হচ্ছে ।
বৈদিক
ঋষিদের নাম ভাঙ্গিয়ে মনুর দল হিন্দুদের কি ধোঁকা দিয়েছে তার নমুনা দেখি
বৈদিক যুগে নারীরা কি আসলেই শিশু অবস্থায় স্বামীর সেবা আর সারা দিন হাড়ি
পাতিল মাজা , লেপা পুছার কাজই করত তার প্রমান । আদিকালে ঋষিগণ যোগ বলে
ঈশ্বর কত্রিক যে মন্ত্র পান তাই বৈদিক মন্ত্র , এই ঋষিদের মধ্যে বিশ্ববারা ,
রোমশা , লপামুদ্রা, জুহু,পউলমি , কাক্ষীবতী, ঘোষা , জরিতা , শ্রদ্ধা ,
কামায়নী আরও অনেক মহিলা ঋষি ছিলেন । সাম বেদে নোধা , গোপায়না, সিকতা ,
নিবাবরি এমন অনেক নারী আজো অমর হয়ে আছেনা । তারা ব্রম্মবাদিনী, স্বয়ং ঈশ্বর
নারীকে মন্ত্র দান করেছেন অথচ মনুর দল সেই নারী দেরকেই বেদ পাঠে অনধিকারী
করে রাখে আজ মাত্র কবছর হল ভারতের নারীরা আন্দোলন করে এই প্রথা বন্ধ করে ,
সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে । বড়বা প্রাথিতেয়ী , আপালা , কঠী নামক সুপণ্ডিত
নারীদের কথা অনেকেই জানেন।
বৈদিক যুগে নারীদের পবিত্র ব্রম্মসুত্রের
দিয়ে দীক্ষিত করা হত , অর্থাৎ তাদের উপনয়ন হত তারা ব্রম্মগায়ত্রী মন্ত্র
উচ্চারন করতেন পবিত্র অগ্নি আধান করতেন একজন পুরুষের সমান ছাড়া কম নয় , যা
আজ আমরা চিন্তাই করতে পারিনা । ব্রহ্মবাদিনী আর সদ্যবধু নামে নারীদের
দুইটা ভাগ ছিল , একটা পবিত্র উৎসবের মাধ্যমে ব্রম্মসুত্রের দ্বারা উপনীত
করে যাদের বিয়ে হত তারাই সদ্য বধু । ইরানের আরজ শাখায়ও এটার প্রচলন ছিল যার
ধারাবাহিকতায় আজো ইরানের জরত্রস্তুদের মধ্যে নওজোত ( নব জন্ম ) প্রথা চালু
আছে । ব্রম্মবাদিনীরা বিয়ে করতেন না তারা পুরুষের ন্যায় ব্রহ্মচর্য পালন
করতেন । উপকুরবান ব্রহ্মচারীরা গুরুগৃহে অধ্যয়ন শেষে পিতৃ গৃহে গিয়ে বিয়ে
করে গার্হস্থ ধর্ম পালন করতেন । মহাভারতের পাণ্ডব মাতা কুন্তিও ব্রম্ম
সুত্র দিয়ে ভূষিত হয়েছিলেন। ৭ শতাব্দীতেও ভারতের অনেক জায়গায় এই প্রথা চালু
থাকলেও মনুবাদিদের প্রাভাব এত বেশি মাত্রায় বিস্তার লাভ করে যে শেষ
পর্যন্ত বেদ দূরে থাক নারী শিক্ষাই বন্ধ হয়ে যায় ।
বৈদিক যুগে
কাশকৃৎস্ন , আপিশালা , ঔধমেধা এদের মত বহু নারী অধ্যাপিকা ছিলেন , বৈয়াকরণ
আপিশালি গোষ্ঠীর ব্যাকরণ যারা পড়ত তাদের বলা হত আপিশালা আর ঔধমেদির
ছাত্রীদের বলা হত ঔধঅমেধা বা ঔধমেধির ছাত্রী। বিদুষী গার্গী আজও অমর হয়ে
আছেন , যাজ্ঞ বল্ক আর গার্গীর তর্ক যুদ্ধের কথা সর্বজন বিদিত । যাজ্ঞ
বল্কের দুই স্ত্রী মৈত্রেয়ী ও কাত্যায়নী দুজনই বিদুষী ছিলেন । বৈদিক যুগের
পরেও বিদুষী বা তপস্বিনী নারীদের উল্লেখ আছে । জনক রাজার সভায় তপস্বিনী
ভিক্ষুণী সুলভার আধ্যাত্মিক আলোচনা বা রাজা রামের সাথে দেখা কড়তে আসা ঋষি
শবরী , দ্রউপদির শিক্ষার কথা সবাই জানে । খৃষ্টের জন্মের ৪০০ বছর আগে
মেগাস্থিনিস ভারত ভ্রমণকালে বহু সুপণ্ডিত নারী চির কৌমার্য অবলম্বন করে
শাস্ত্রচর্চা করতেন এবং ঋষিদের সাথে শাস্ত্রবিচার করতেন বলে উল্লেখ করেন।
বহু ব্রহ্মচারিণীর কথা বৈদিক সাহিত্য, রামায়ন , মহাভারতে উল্লেখ আছে ।
ব্রহ্মচারিণী আর ব্রহ্মবাদিনীর মধ্যে পার্থক্য এই যে ব্রহ্মচারিণীরা
ব্রহ্মচর্য পালন শেষে গারহস্তে প্রবেশ করতেন আর ব্রহ্মবাদিনীরা চির কৌমার্য
গ্রহন করতেন , কোথাও কারো বাধা বাধা ছিল না ।
নাচ, গান,বাজনা যদি নারী
পুরুষ সবাই করত কিন্তু নারীদের জন্য তা প্রায় স্ত্রীলোকের শিক্ষার একটা
অংশ ধরা হত। যজ্ঞের সময় মহিলারাই সাম গান করত , বৈদিক যুগে মা বাবা শুধু
পুত্র নয় একটা বিদুষী কন্যা সন্তান লাভের জন্যও নানা পন্থা অবলম্বন করত এটা
ব্রিহদারন্যক উপনিষদে উল্লেখ আছে ।
বৈদিক যুগে নারীদের অস্ত্র চালনা
যুদ্ধ বিদ্যা শিক্ষা তা বেদেই প্রমান পাওয়া যায় , এমন কি রাজতন্ত্রের যুগেও
রাজ মহিষীদের যুদ্ধ করার কথা জানা যায়। রাজা নমুচির স্ত্রী অতি ভয়ঙ্করি
এবং দীর্ঘ স্থায়ী যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন। ঋক বেদে উল্লেখ আছে রাজা
খেলের রানী বিশপলার বীরত্ব পূর্ণ বর্ণিত আছে , যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি উরুতে
গুরুতর আঘাত পেলে অস্ত্র প্রচার করে তার উরু ফেলে দিয়ে লৌহ নির্মিত কৃত্তিম
উরু সংযোজন করা হয় এতে এটাই প্রমানিত হয় যে তৎকালীন সময়ে যেমন ছিল নারীর
সমান অধিকার তেমনি ছিল উন্নত শল্য চিকিৎসা যা বর্তমানের মতই কৃত্তিম অঙ্গ
সংযোজনের ব্যাবস্থা । মুদ্গলানী ছিলেন ভয় লেশ শূন্য রণপণ্ডিত , সামরিক
প্রশিক্ষক ও রন চাতুর্যের উজ্জল দৃষ্টান্ত । সুভদ্রাও যুদ্ধা ছিলেন ,
অনার্যদের সৈন্য বাহিনীতে বহু নারী সৈন্য থাকত , মেগাস্থিনিসের ভাষ্য মতে
চন্দ্র গুপ্তের প্রাসাদ রক্ষী তরবারিধারিণী ও অস্ত্র বিদ্যায় পারদর্শী
সুদক্ষা বলবতি রমণী বাহিনীর উল্লেখ করেছেন। খৃষ্ট পুঃ দ্বিতীয় শতকে পতঞ্জলি
তার মহাভাশ্যে শাক্তিকি নামে বর্শা বা বল্লম নিক্ষেপ কারিণী নারীদের
উল্লেখ করেছেন।
এই আলোচনায় এটা পরিস্কার যে বৈদিক যুগে সর্বতোমুখী
স্ত্রী শিক্ষার প্রমান ও সমধিক উন্নত ছিল । কিন্তু এই মনুর আইন নারীর
সমুন্নত প্রতিষ্ঠা ভূমিকে ভাঙতে শুরু করে নারীর অবস্থান এমন অবস্থায় গিয়ে
দারায় যে সুদ্রের মত তারাও উপনয়ন ও বেদ পাঠে অনধিকারী হয়ে যায় , আর এটার
জন্য মুলত সামাজিক ও রাজনৈতিক কারন দায়ী যা পরবর্তীতে আলোচনা করব।
চলমান ------
সাত
শতাব্দীতে ওইসকল ব্রাম্মন্য বাদীরা সমুদ্র যাত্রা নিষিদ্ধ করে বৈশ্য
অর্থাৎ ব্যাবসায়ীদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বন্ধ করে দিয়ে দেয় । দ্বাদশ
শতাব্দীতে জীমূতবাহন উত্তরাধিকার আইন দায় ভাগ রচনা করে প্রবর্তন করে তার
কুফল আমরা আজও বহন করে যাচ্ছি ।
শূদ্রঃ- বৈদিক যুগে নারীরা জ্ঞান
বিজ্ঞান , ললিতকলার পাশাপাশি তুলা থেকে সুতা তইরি,কাপর রঙ করা,ঝুরি বানানো
সহ বেতের কাজ , সুগন্ধি তৈরি, কামার , কুমার, স্বর্ণকার, তাতি, ধোপা,
কৃষিকাজ প্রায় সব ধরণের শ্রম ও বিলাসিতার কাজই নারী স্বাধীনভাবে করে আসছিল
কিন্তু মনুবাদীর দল এইসব পেশাকে এক শ্রেণীর কাজ হিসাবে ধার্য করে আইন চালু
করে । তাতে মেয়েদের অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করে দিয়ে তাদের দাসত্বের শৃঙ্খলে
বন্দি করে ফেলে , আর ওদিকে এইসব পেশাকে নিম্ন শ্রেণীর কর্ম হিসাবে চালু করে
। এদিকে শূদ্র নাম দিয়ে কৃষক , কামার , কুমার, তন্তুবায় , স্বর্ণকার ,
মালাকার, ধোপা প্রত্যেককে আইন করে আলাদা করে দেয় এবং এই সকল কর্ম জীবীদের
সভ্য সমাজ থেকে দূরে ঠেলে দিয়ে তাদের উপর চালায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অকথ্য
নির্যাতন। শেষ পর্যন্ত ঐ নারী ও শূদ্র দেরকে জীবনের মত অশিক্ষিত ও দরিদ্র
করে ফেলে যার কুফল হিন্দুরা আজও বহন করে যাচ্ছে ।
ব্রাম্মন্য বাদ
প্রতিষ্ঠা আর তাদের তৈরি কোঠর জতিভেদ প্রথার নামে নির্যাতনের ফলে, নারী
নিগ্রহের ফলে যখনই এদেশে অন্য যে কোন জাতিভেদ প্রথাহীন ধর্মীও মতবাদ এসে
আহ্বান জানিয়েছে তখনই হিন্দুরা দলে দলে সেইসব ধর্মের আশ্রয় নিয়েছে
এবং
এখনো তা চলছে , এই মনুবাদীরা যে প্রথা চালু করেছিল তার অভিশাপের খেসারত
হিন্দুরা আজও দিয়ে যাচ্ছে , হিন্দুদের মধ্যে ধর্ম হীনতা আর ঐক্য হীনতার
অন্যতম কারণই হচ্ছে মনুবাদীদের আত্মকেন্দ্রিক আইন ।
মনুবাদিদের করাল
গ্রাস থেকে হিন্দুদের রক্ষা করতে আজ এতো বছর ধরে অনেক জ্ঞানী জন সত চেষ্টা
করেও পূর্বের বৈদিক যুগের অবস্থায় আজও হিন্দুদের ফিরিয়ে আনতে পারেন নাই।
কালা পাহাড়ের (কালা চাঁদ রায় ১৫৬৩-১৫৭২ ইং)মত অনেকেই এই ধর্ম ত্যাগ করে
নানাভাবে প্রতিশোধ নিয়েছে । আবার গৌতম বুদ্ধ , বঙ্কিম ,রবিন্দ্রনাথ,রাজা
রামমোহন ,ঈশ্বরচন্দ্র , রামদাস, লালন , রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ , আউল চাঁদ,
হরিচাদ ঠাকুর , লোকনাথ ব্রহ্মচারী , শ্রী চৈতন্য দেব ইত্যাদি কেউ সাহিত্য
দিয়ে , কেউ ধর্ম বানী দিয়ে কেউ বিদ্রোহ করে জুগ জুগ ধরে চেষ্টা করে করে
চলছেন মনুবাদের হাত থেকে হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করার জন্য কিন্তু আজো
মনুবাদীর জাল থেকে হিন্দুরা বেড়িয়ে আসতে পারছে না ।
তাই বলি , হে বিশ্ব
সনাতনির দল বেরিয়ে আস মনুবাদের খাঁচা থেকে , মুক্ত বিহিঙ্গের ন্যায় বিচরণ
কর বৈদিক আদর্শে , এক বৈদিক পতাকা তলে মিলিত হও , বজ্র কণ্ঠে আওয়াজ তোল বল
আমরা সনাতন ।