Saturday, August 3, 2013

লাভ জিহাদের পরবর্তী পরিনাম (ধারাবাহিক, কেইসষ্টাডি-৭)




এ বিষয়টি নিয়ে প্রথমপর্ব লেখার শুরুর আমি আমার নেট বন্ধুদের নিকট অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম এজন্য যে কোন সত্যিকারের ঘটনাপুঞ্জি কথামালা লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার যে যোগ্যতা থাকা দরকার, তা আমার নেই বলে আমি মনে করি। এমতাবস্থায় আমার অপরিপক্ক লেখামালায় কোন শব্দচয়ন যদি কারো মনে আঘাত দেয় সেজন্য তা আমার জন্য অপরাধ বৈকি। সে অপরাধরোধ থেকেই মা চাওয়া মূল কারণ। আরো অনুরোধ করেছিলাম পোষ্ট গুলি পড়ে যাদের নিয়ে লেখা গুলো লিখছি সে সব ভিকটিম গুলোকে কোন বন্ধু যেন গালিগালাজ না করেন। কিন্তু দেখলাম অনেকেই আমার অনুরোধ রাখেনি।

লেখার শুরুতে তিনটি পর্বে মেয়ে ভিকটিমের বিষয়ে লিখেছিলাম। দেখলাম অনেক ছেলেবন্ধু ভিকটিম সে সব হতভাগ্য বোনদেরকে একতরফা গালিগালাজ করেছেন। এরপর ধারাবাহিত তিনটি পর্বে লিখেছিলাম ভিন্ন ভিন্ন বয়েসী ছেলেদের নিয়ে, দেখছি এখানেও গালিগালাজ চলছে। সুতরাং মন্তব্যে জায়গায় গালি গালাজ না করবার জন্য আবারো অনুরোধ করছি। আমি পুনরায় অনুরোধ করছি, আপনারা লেখা গুলি পড়ে গালিগালাজ না করে আমাকে মতামত পাঠান এ বিষয়ে লেখা চালিয়ে যাব কি না, কিংবা বস্তুনিষ্ঠ লেখার মান কিভাবে আরো উন্নতিন করা যায়। আমি আমার সকল বন্ধুদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, এ পোষ্ট গুলি পড়ার পর যদি কারো মনে যদি একটু খানি সচেতনতা অনুভব হয়, তাহলে আমি সার্থক বলে মনে করি। যাহোক, আজ হতে পরবর্তী কটি পর্বে পুনরায় কিশোরী মেয়েদের ভালবাসায় আটকে যাওয়ার কাথা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করছি।

প্রায় সব বড় ছোট সকল কবি সাহিত্যিকদের লেখামালায় কিশোরীদের কথা নানা ভাবে এসেছে। রবিঠাকুরতো বলেই ফেলেছেন “কিশোরীর প্রথম প্রেম টেকে না, তবে এপ্রেম পরবর্তী জীবনের কোন কালেই নাকি ভুলে না। তিনি আরো বলেছেন, যে সকল পুরুষ মানুষ যদি কোন কিশোরীর প্রথম প্রেম পেয়েছেন কিংবা অনুভব করতে পেছেছেন, সে পূরুষকে ভাগ্যবানই বলতে হবে। কেননা, ঐ পুরুষটিকে কিশোরী সারা জীবন মনে রাখে। আধুনিক বিজ্ঞানও নাকি তাই বলে। কিশোরী মন নিয়ে নানান গবেষনাও হয়। গবেষনা পত্রে প্রায় একটি মজার ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়, তাহলো কিশোরীরা প্রায়ই মধ্য বয়স্ক পূরুষের প্রেমে পড়েন। এরকারণ হলো কিশোরী মন হয় স্বপ্নচারী, আর স্বপ্নচারী মন সর্বদা চমৎকারিত্বে আকৃষ্ট হয়। কম বয়েসী পূরুষ থেকে বেশী বয়স্ক পূরুষ সে চমৎকারিত্ব প্রদর্শনে পারদর্শী হয় । সম্ভবতঃ একারনেই কিশোরীরা অধিকবয়স্ক পূরুষের প্রেমে পড়ে।

আমরা যদি ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাব পাকিস্তানের জনক কায়েদে আযম জিন্নাহ স্বয়ং ৪০ বছরের অধিক বয়সে তার সমবয়েসী অগ্নি উপাসক বন্ধুর কিশোরী মেয়েকে রতিকে পটিয়ে বিয়ে করে সেই সময়ে জিন্নাহ অমুসলিম বন্ধু মহলে ধিক্কৃত হয়েছিলেন। কথিত আছে, কিশোরী রতির বাবার সাথে বন্ধুত্বে সুবাধে অমুসলিম রতিদের বাড়ীতে জিন্নাহ সাহেবের অবাধে যাতায়াত ছিলো। জিন্নাহ সাহেব যখন মেয়েটিকে প্রথম বন্ধু বাড়ীতে আবিস্কার করেন, তখন মেয়েটির বয়স ছিলো চৌদ্দ বছর। তবে ঐ সময়ের বিখ্যাত এ আইনজ্ঞ মানুষটি কিশোরীটিকে পটিয়ে সাথে সাথে ধর্মান্তর করিয়ে বিয়ে করে ফেলেননি। বরং তিনি রতির বয়স ১৮ হওয়া অবধি ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেছিলেন এবং যেদিন রতির বয়স আঠারতে উন্নীত হলো, সেদিনই কায়েদে আযম জিন্নাহ সাহেব রতিকে কোর্টে হাজির করিয়ে এফিডেফিডের মাধ্যমে ধর্মান্তরের ঘোষনাপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে কাবিন নামায় স্বাক্ষর করায়\ এঘটনাটি ভারত পাকিস্তান স্বাধীনতা পূর্ব ঘটনা এবং এটি ঐ সময়ের মুসলিম যুব সমাজে ভীষন ভাবে উদ্ভীপ্ত করেছিলো। অনেকেই বলেন, কাযেদে আযম জিন্নাহ সাহেব কর্তৃক বহু ভাবে অসম এ বিয়ের সাথে নাকি সে ১৯৪৭ সালের টু নেশন থিউরী তথা দ্বিজাতি তত্বের একটা সম্পর্ক আছে। আপনাদের জানার জন্য আমি একটু খোলাসা করেই বলি।

আমরা কম বেশী সবাই ভালো করেই জানি ১৭৫৭ সালে বাংলার আম্রকাননে লড ক্লাইভ ও নবাব সিরাজের বাহিনী যুদ্ধের ফলাফলের মাধ্যমে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ইংরাজদের হাতে চলে যায়। বাংলার ইতিহাসখ্যাত এ যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন নবাবে প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খা, যিনি একজন খাঁটি মুসলিম ছিলেন। অন্য দিকে মীর মদন ও মোহন লাল নামীয় নবাবের আরো দুজন হিন্দু সেনাধ্যক্ষ ছিলো যারা, যুদ্ধ করতে করতে গিয়ে প্রাণ বির্ষজন দিয়েছেন। ঠিক এর পরবর্তী ১৯৪৭ সালের অগাষ্ট পর্যন্ত ভারত বর্ষের হিন্দুদের ইতিহাস ছিলো ইংরাজদের বিরুদ্ধে নানা ভাবে বিদ্রোহ করিয়ে এদেরকে ভারত থেকে বিতাড়ন করার এবং ভারতবর্ষ মুক্ত করার চেষ্টার ইতিহাস। একারণেই ইংরাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শহীদ স্বদেশীদের তালিকায় হিন্দু স্বদেশী শহীদ ব্যতীত মুসলিম শহীদ পাওয়া ভার। এর অন্যতম কারণ হলো, ঐ সময়ে মুসলিম আলেম ওলামারা ইংরেজী পড়তে চাইতেন না এবং মুসলিমদের ইংরেজী পড়তে নিরুৎসাহিত করতেন। হিন্দুরা বহু আগেই বুঝে গিয়েছিলো, ইংরেজীদের ভারত হতে তাড়াতে হলে ইংরাজদের বুঝতে হবে এবং এদেরকে বুঝতে হলে ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াটা খুব জরুরী। এ সত্য কথাটি তখকার মুসলিম সমাজ বুঝতে অনেক দেরী করে ফেলেছিলো। তবে বলে রাখা ভাল, গুটি কয়েক মুসলিম সে সময়ে বিলাত ফেরত ইংরাজী শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলো এবং এরা ইংরেজী বিরোধী আন্দোলনের অংশীদার হয়েছিলো। ঐ গুটিকয়েকের মধ্যে কায়েদে আযম জিন্নাহ অন্যতম এবং তিনি ইংরাজ বিরোধী আন্দোলনের প্রায় প্রথম ও দ্বিতীয় সারীর নেতাদের দলে ছিলেন।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মিঃ জিন্নাহ তার বন্ধুর কিশোরী কন্যার পেছনে প্রায় ৪ বছর সময়কাল লেগেছিলো। এ সময়ের মধ্যে তিনি স্বদেশী আন্দোলনে সম্পূর্ণ রুপে অনুপস্থিত ছিলেন\ রতির ১৮ বছর পূর্ণ এবং তাঁকে কোর্টে নিয়ে বিয়ে ও মধুচন্দ্রিমা পর্ব শেষ করে তিনি যখন রাজনীতির মাঠে ফেরেন, তখন ভারতবর্ষে ইংরাজ বিরোধী আন্দোলন অনেক দূরে চলে গেছিলো এবং ভারতবর্ষ প্রায় মুক্ত হবার পথে ছিলো। ঠিক ঐ সমুর্তে জিন্নাহ সাহেব তার সেই বিখ্যাত টু নেশন থিওরী এপ্লাই করেন, যা ঐ সময়ের মুসলিম সমাজকে আকৃষ্ট করেছিলো। টু নেশন থিওরী তখনকার সময়ের মুসলিম সমাজকে প্রচন্ড ভাবে আকৃষ্ট করবার পেছনে রতিকে ধর্মান্তরকরে নিকাহ করার ঘটনাও কাজ করেছে। কেননা, ঐ সময়ের মুসলিম যুবসমাজ বুঝে নিয়েছিলো, জিন্নাহ সাহেব তাদের আদর্শ হতে পারে। যাহোক, জিন্নাহ সাহেবের চমর সা¤প্রদায়িক থিওরী ঐ সময়ের সংখ্যা লগিষ্ট মুসলিম সমাজকে আকৃষ্ট করার ফলাফল ভারত ও পাকি¯Íান নামে দুটি বাষ্ট্রের জন্ম কম বেশী সবাই জানেন।

এখানে বলে রাখা ভাল যে, জিন্নাহ সাহেব টু নেশন থিওরী কতটা উপমহাদেশের মুসুলমানদের উন্নতির কথা চিন্তা করেছেন তা তর্কের বিষয়, তবে একটা বিষয় নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, রাজনীতি মূল বিষয় হলো চকৎকারিত্বের মাধ্যমে জনসাধারনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ও তাদের সমর্থন আদায় করা। গবেষকদের ধারণা মিঃ জিন্নাহ সে কাজটিই করেছিলেন এবং তিনি সফলও হয়েছিলেন। যদিও টু নেশন থিওরীর পয়দা আজকের পাকিস্তানকে অনেকে ফাক-ই-স্তান বলে গালি দেয় এবং জিন্নাহ সাহেবের সে থিওরীর যন্ত্রনায় নরম মাটির এ বাংলাদেশেও ধর্মীয় উন্মাদনায় মাঝে মধ্যে ত বিত হয়। যেমনটি আমরা দেখলাম গেল ৫ মার্চ হেফাজতি তান্ডব।। চলবে...

চিত্রগুপ্ত
১৯ মে ২০১৩

No comments:

Post a Comment