উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হিন্দু রাজনীতি |
---|
![]() |
রাজনীতি প্রবেশদ্বার ভারত সরকার প্রবেশদ্বার হিন্দুধর্ম প্রবেশদ্বার |
ভারতের ইতিহাসের নানা পর্বে ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার নিজস্ব পরিচিত সৃষ্টির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল এদেশের দেশীয় চিন্তাধারা।[২] এই চিন্তাধারা থেকেই ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ভারতবাসীর মনে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।[৩] ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশ্যে সংঘটিত সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম[৪], অহিংস আন্দোলন[৫] এবং সকল প্রকার শক্তিশালী রাজনৈতিক চেতনা[৬] এই দেশীয় চিন্তাধারা থেকেই অনুপ্রেরণা লাভ করে।
উত্তর-মার্ক্সীয় পাশ্চাত্য বুদ্ধিজীবি মহলে 'জাতীয়তাবাদ' শব্দটির সঙ্গে যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জড়িত আছে, ভারতে সেরকম কিছু দেখা যায় না। বরং এই শব্দটি এদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার উচ্ছেদের লক্ষ্যে সংঘটিত স্বাধীনতা আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।[৭]
পরিচ্ছেদসমূহ
ইতিহাস
খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সঙ্গম রাজারা ছিলেন দাক্ষিণাত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিন্দু শাসকগোষ্ঠী। এঁরা "হিন্দুরায় সুরতন" (হিন্দু শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম) নামে অভিহিত ছিলেন।[১০] সঙ্গম শাসকরা বিজাপুর সুলতানির বিরুদ্ধে উপর্যুপরি সংঘাতে লিপ্ত হন। এই সময় তাঁদের উপাধির "হিন্দু" শব্দাংশটি স্থানীয় শাসক হিসেবে তাঁদের স্বতন্ত্র এক পরিচিতি দান করে। কারণ সুলতানদের "বিদেশি বংশোদ্ভুত মনে করা হত"। কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন "হিন্দুরা" শুধুমাত্র বিদেশি শাসনের বিরোধিতা করা ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে নিজেদের একক ধর্মীয় সত্ত্বার কথা কল্পনা করেনি। উদাহরণ স্বরূপ, সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে রচিত তেলুগু "রায়বচকমু" গ্রন্থে মুসলমান শাসকদের নিন্দা করা হয়েছে মুখ্যত বিদেশি ও বর্বর শাসক হিসেবে এবং গৌণত মুসলমান শাসক হিসেবে।[১১]
পদ্মনাভ রচিত "কাহ্নবাদে-প্রবন্ধ" মহাকাব্যে জালোরের চৌহান নায়কদের "হিন্দু" বলে গৌরবান্বিত করা হয়েছে। এই কাব্যের রচনাকাল ১৪৫৫ খ্রিষ্টাব্দ। মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের জন্য রাজপুত শাসক মহারাণা প্রতাপ "হিন্দু-কুল-কমল-দিবাকর" উপাধিতে ভূষিত হন।[১২] সপ্তদশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক শিবাজীর শাসনের আদর্শ ছিল "হিন্দভি স্বরাজ্য"; মারাঠি ভাষায় যার অর্থ "হিন্দুদের স্বরাজ্য"। তবে এই "হিন্দভি" শব্দটির ভারতীয়দের স্বাধীনতার পন্থা হিসেবেই প্রযোজ্য ছিল; কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর শাসন হিসেবে নয়।[৯]
ঊনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু নবজাগরণ
অধিকাংশ হিন্দু সংস্কার আন্দোলনেরই সূত্রপাত হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে। এই সকল আন্দোলনে প্রাচীন উপনিষদ ও বেদান্ত শাস্ত্রের এক নূতনতর ব্যাখ্যা প্রদত্ত হয় এবং মনোযোগ দেওয়া হয় সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে।[৬] এই সকল আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ভারতের তদনীন্তন ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের পাশ্চাত্য শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্বেতাঙ্গ প্রাধান্যের ধারণাকে খর্ব করা। এবং এই চেতনা থেকেই একটি দেশাত্মবোধক চেতনার সৃষ্টি হয়; যা থেকে জন্ম নয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক আদর্শের।[৩]
রাজা রামমোহন রায় প্রাচীন ঔপনিষদিক গ্রন্থগুলি থেকে একটি আধুনিক যুক্তিবাদী ভারতের চিত্রকল্প কল্পনা করেন।
No comments:
Post a Comment