শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর থেকে: শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের হিন্দু - অধ্যুসিত
একটি মহল্লায় গত দু দিন ধরে উসকানি মূলক লিফলেট ‘চরমপত্র’ বিতরণ নিয়ে
স্থানীয় প্রায় দেড় শত হিন্দু পরিবারের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। লিফলেটে
বলা হয়েছে, ‘তোমরা হিন্দু, মুসলিমের চরম শত্রু। তোমরা আসামের মুসলিমদের
অন্যায়ভাবে দিনের পর দিন হত্যা করে আসছ। আর তোমরা হিন্দুরা ঝিনাইগাতীর
মাটিতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই, আমরা দিব না। পরবর্তী চরমপত্র দেয়ার আগেই
আংলাদেশ ছেড়ে ভারতবাসী হবে। তা না হলে গণহারে হত্যা করে আসামের মুসলিম
নিধনের প্রতিশোধ নেয়া হবে। তোমরা হিন্দুরা আমাদের জাতীয় শত্রু। তোমরা
আমাদের জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে আমাদের জায়গা জমি দখল করেছ। দেখি
তোমাদের ভগবান কিভাবে বাঁচায়। ধন্যবাদ- মুসলিম ইয়ং গ্রুপ, শ্মাসান ঘাট।
জেলা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়কে শংকিত না হতে বললেও
ওই চরমপত্র নিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর এবং গারো পাহাড় এলাকার সীমান্তে
বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়রা এটি ¯্রফে সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখতে চায় না।
তারা ইতিমধ্যে শেরপুর জেলা পুলিশ ও স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও গণমান্য
ব্যাক্তিদের নিয়ে বৈঠক করলেও সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের
ব্যাবসা-বানিজ্য, জমি-জমা এবং তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুল ও কলেজে
যাতায়াতের বিষয় নিয়ে বেশ শংকার মধ্যে বসবাস করছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভারতের আসাম রাজ্যে স্থানীয়
মুসলমানদের উপর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ চরম নিপিরন ও হত্যাষজ্ঞের ঘটনা
ঘটায়। ওই ঘটনাকে পুজি করে ঝিনাইগাতী সীমান্তে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী
সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফন্ট অব আসম বা ‘উলফা’র আস্তানা ও তাদের কার্যক্রম
বর্তমান সরকার কঠোর হস্তে দমন করায় তাদের কোন বিচ্ছিন্ন কর্মী বা নেতা
বাংলাদেশের ভিতর ভারতের আসামের মতো বিশৃংখলা সৃষ্টির লক্ষে স্থানীয়
মুসলমানদের ক্ষেপিয়ে তোলার পায়তারা করা হচ্ছে বলেও অনেকেই ধারনা করছে।
তবে উলফার বিষয় নিয়ে পুলিশ প্রশাসন কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। কিন্তু
ঝিনাইগাতী হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক
সভাপতি অনন্ত কুমার রায় লিফলেট বিতরনের সাথে উলফার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে
বলে ধারনা করে বলেন, আমরা এখানে বংশ পরম্পারায় বাবদাদার ভিটে-মাটিতে যুগ
যুগ ধরে এই ঝিনাইগাতীতে বসবাস করছি আজ পর্যন্ত স্থানীয় মুসলমান বা অন্য
ধর্মাবল্বী কারো সাথেই কোন দাঙ্গা-ফ্যাসাদ তো দুরের কথা সামন্যতম ঝগড়া
বিবাদও হয়নি।
এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান জানান, কথিত চরমপত্র
বিতরণের খবর পাওয়ার পরই গত বৃহস্পতিবার আমারা ঝিনাইগাতী উচ্চ বিদ্যালয়ে
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও সুধি
সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছি। তাদের আশ্বস্থ করেছি যে, এ লিফলেট
বিতরণের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত খুজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে
এবং অহেতুক শংকিত হওয়ার কোন কারণ নাই। এছাড়া উলফার বিষয়ে তিনি কোন
মন্তব্য করতে রাজি হননি।
No comments:
Post a Comment