নিরীহ পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরাই। মূল হামলাকারী পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।তাঁরা হলেন—মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল, মীর মো. নূরে আলম ওরফে লিমন, মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, মো. ইমদাদুল হক ও মো. ওবাইদুল কাদের। এর মধ্যে চাপাতি দিয়ে প্রথমে কুপিয়েছেন শাকিল। বাকিরা রড আর লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন বিশ্বজিৎকে। ছবিতে ঘড়ির কাটার দিকে
১। ওবাইদুল কাদের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। বর্তমানে তিনি মাস্টার্সের ছাত্র। তাঁর বাবার নাম মো. মহিউদ্দিন। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ার চর কৈলাশে।
২। ইমদাদুল হক দর্শন বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁর বাবার নাম মো. আকরাম আলী। গ্রামের বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার পাঁচ কায়রায়।
৩। ছবিগুলোতে যে চারজনকে স্পষ্টভাবে বিশ্বজিৎকে চাপাতি, রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করতে দেখা যায় তারা হলো-
মাহফুজুর রহমান নাহিদ। কালো হাতা কাটা স্যুয়েটার ব্লু-জিন্স পরে ছিলেন তিনি।ছবিতে নাহিদ যখন বিশ্বজিৎকে পেটাচ্ছিলেন তখন তাদের দুজনের হাতের নিচ দিয়ে মাঝ বরাবর যে মুখটি দেখা যায় তিনি নুরে আলম লিমন।রড হাতে ফুল হাতা গেঞ্জি পরিহিত আরেকজনকে দেখা যায় নাহিদের পাশে থেকে বিশ্বজিৎকে আঘাত করছেন। তিনি আলামিন।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ ব্যাচের ছাত্র। সূত্র জানায়, আলামিনের পরিবাররের সবাই বিএনপির সমর্থক। তিনি প্রথম দিকে ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন। কিন্তু পরে ছাত্রলীগেই নিজের ভাগ্যসন্ধানে নেমেছেন। এই আলামিনও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের কর্মী বলেই অনেকের কাছে পরিচিত। আলামিনের জন্মস্থান শরিয়তপুর। লিমনের ডান পাশ থেকে গলায় চাদর গায়ে যাকে বিশ্বজিৎকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায় তিনি আজিজ। আজিজও ছাত্র লীগের কর্মী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২য় ব্যাচের ছাত্র। তিনি সভাপতি প্যানেলে ছাত্রলীগ করেন বলেই জানা গেলো ক্যাম্পাস সূত্রে। আজিজের জন্মস্থান খুলনায়।
৪। মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ বাংলা বিভাগের ছাত্র। গত বছর মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁর বাবার নাম আবদুর রহমান। ভোলার দৌলতখানের দক্ষিণ জয়নগরে তাঁর গ্রামের বাড়ি। বিশ্বজিতের বাম হাত শক্ত করে ধরে রড দিয়ে পেটাচ্ছিলেন তিনি। সূত্র জানায় এই মাহফুজুর রহমান নাহিদের আঘাতগুলোই বিশ্বজিতের মৃত্যু ত্বরান্বিত করেছে। নাহিদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে ফেললেও এর ছাত্রলীগের মায়া কাটাতে পারেননি। পড়ালেখা শেষ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলামের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসি কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। শরিফুলের সঙ্গে একই বিভাগের একই বর্ষের ছাত্র ছিলেন নাহিদ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলে এরই মধ্যে অছাত্রের খাতায় নাম লেখানো নাহিদ সহ-সভাপতির একটি পদ পেয়ে যাবেন এমনটা মনে করছেন ক্যাম্পাসের অনেকেই। নাহিদের জন্মস্থান ভোলা জেলায়।
৫। মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র। বর্তমানে তিনি ষষ্ঠ সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। তাঁর বাবার নাম আনসার আলী। পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলায় তাঁর বাড়ি। শাকিলের পরিবার বিএনপির ঘোর সমর্থক। জগন্নাথে প্রথম পর্যায়ে শাকিলও ছাত্রদল করতেন। পরে ছাত্র লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিরাজুলের সাহচর্য পান। শাকিলও বিশ্বজিৎকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছেন সেই ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। শাকিলের জন্মস্থান বরিশাল।
৬। মীর মো. নূরে আলম ওরফে লিমন ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বর্তমানে তিনি মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। তাঁর বাবার নাম মীর মো. নূরুল ইসলাম। তাঁর গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগাছার শুলিপাড়ায়। লিমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ঢুকেই রাজনীতির কালো অঙ্গনটিকেই বেছে নেন লিমন। সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের কর্মী এই লিমন। লিমনের জন্মস্থান রংপুর জেলায়।
অপর একটি ছবিতে গালে কালো দাগ, রড দিয়ে আঘাত করেছেন বিশ্বজিৎকে। তিনি শাওন।তিনিও সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের কর্মী। আর ইতিহাস বিভাগের ৩য় ব্যাচের ছাত্র। শাওনের গ্রামের বাড়ী খুলনা।
বিশ্বজিৎ হত্যায় জড়িত অপর একজন ইমরান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র।ফরিদপুরের ছেলে ইমরান ছাত্রলীগের নামধারী সন্ত্রাসী। ভিক্টোরিয়া পার্ক সংলঘœ মার্কেটের দোতলায় ইমরান ছুরি দিয়ে আঘাতে জর্জরিত করেন বিশ্বজিৎকে। ক্যাম্পাসে জানা গেলে ইমরানও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের কর্মী।
বিশ্বজিৎকে মারধরের সুত্রপাত ও তাকে টার্গেট করার মূলে ছিলেন রাজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ৩য় ব্যাচের ছাত্র। রাজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায় বলে জানায় ছাত্রলীগ সূত্র। তবে তার বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিকবার সাময়িক বহিস্কার হওয়া ছাত্র তমালও ছিলেন এই হত্যাকা-ের একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২য় ব্যাচের ছাত্র তমালের বাড়ি বগুড়ায়। প্রথমে ছাত্রদল করলেও বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের আশ্রয়ে অপকর্মে জড়িত হওয়া তার জন্য নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে এশাধিক সূত্র।বিশ্বজিৎকে মারধরে অংশ নেওয়ার আগে তমালের কোর্ট এলাকায় আইনজীবীদের মারধর করে মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার দৃশ্যও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। যে কোন নাশকতাকে আশ্রয় করে জিনিসপত্র লুটে নেওয়া তার অভ্যাসগত বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্র। তমালও বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের কর্মী। আইন বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের ছাত্র মিলনও ছিলেন এই হত্যাকা-ে। ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায় মিলনও একাধিকবার রড দিয়ে আঘাত করেন বিশ্বজিৎকে। মিলনের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী।
হত্যাকারী দলের অপর সদস্য রুদ্র ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। বিশ্বজিৎ পালিয়ে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করলেও তাকে রেহাই দেননি ছাত্রলীগ নামধারী এই সন্ত্রাসী। পেছন থেকে ছুটে গিয়ে বিশ্বজিৎকে আটকে ফেলেন রুদ্র। তার দেশের বাড়ি খুলনা।এছাড়া বিশ্বজিৎ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মোশাররফ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২য় ব্যাচের ছাত্র। মোশারফের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। প্রথম পর্যায়ে মোশারফ ক্যাম্পাসে শিবিরের সক্রিয় কর্র্মী ছিলেন তিনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ ব্যাচের ছাত্র কামরুলও বিশ্বজিৎকে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে দাবি অনেকের। কামরুলের দেশের বাড়ি মাদারীপুর।বিশ্বজিৎ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত মুন্নাও প্রথমে ক্যাম্পাসে শিবিরের কর্মী ছিলেন। মুন্নার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। তিনি জগন্নাথ বিশ্বিবিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২য় ব্যাচের ছাত্র।
সূত্রঃ
১) প্রথম আলো
২) বাংলা নিউস ২৪
No comments:
Post a Comment